অপরাধ

মৌলভীবাজারে ব্যবসায়ী রুবেল হত্যা রক্তমাখা নোট ধরে উদঘাটন, হতাশ তরুণ জুহেলের ভয়াবহ অপরাধজাল

  প্রতিনিধি 18 August 2025 , 7:07:03 প্রিন্ট সংস্করণ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজার শহরের শমসেরনগর রোডে আলোচিত ব্যবসায়ী শাহ ফয়জুর রহমান রুবেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার ১০ দিন পর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নিতে পরিকল্পিতভাবে দোকানে প্রবেশ করে রুবেলকে হত্যা করে ২২ বছর বয়সী যুবক জুহেল মিয়া ওরফে জুয়েল ওরফে আলিফ।

রবিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।

গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে শহরের ব্যস্ততম শমসেরনগর রোডে সিএনজি স্ট্যান্ডসংলগ্ন “এফ রহমান ট্রেডিং” দোকানে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই সময় দোকানে একাই ছিলেন ব্যবসায়ী রুবেল (৫৫)। নামাজ শেষে দোকানে ফেরার পরপরই এক অজ্ঞাত যুবক ক্রেতা সেজে প্রবেশ করে। রঙ কেনার কথা বলে দোকানের ভেতরে নিয়ে গিয়ে আচমকা ধারালো ছুরি বের করে রুবেলের শরীরে একের পর এক আঘাত করে।

হামলার পর দোকানের ক্যাশ থেকে মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারী।

রহস্য উদঘাটনের সূত্র: রক্তমাখা নোট

হত্যার পর নিহতের পরিবার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা (মামলা নং-১৮/২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪) দায়ের করে। মামলার তদন্তে পুলিশের হাতে আসে এক রহস্যজনক সূত্র—একটি রক্তমাখা ২০ টাকার নোট।

পুলিশ সুপার জানান, হত্যার পর পালানোর সময় খুনি একটি অটোরিকশায় ওঠে। রিকশাচালক জানায়, যাত্রীর হাতে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। ভাড়া মেটাতে সে একটি রক্তমাখা নোট দেয়। এ তথ্য পেয়ে পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। সেখানে দেখা যায়, খুনির হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় খুনি নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এভাবেই খুনিকে শনাক্ত করা হয়।
শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ আগস্ট দুপুরে শ্রীমঙ্গলের লইয়ারকুল গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে জুহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত মাস্ক, জুতা, রিকশা ভাড়ায় দেওয়া রক্তমাখা নোট এবং হার্ডওয়্যার দোকান থেকে কেনা এলবো ও গ্লু উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুহেল হত্যার দায় স্বীকার করে। সে জানায়, আগের দিন ৬ আগস্টও সে শহরে এসেছিল। তবে সুযোগ না পেয়ে ফিরে যায়। পরদিন আবার শহরে এসে বিভিন্ন দোকানে ঘোরাফেরা করে। রুবেলকে একা পেয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।

হতাশ তরুণের অপরাধে জড়িয়ে পড়া
জুহেলের পারিবারিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবা দিনমজুর, নিজে বেকার। আগে স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করলেও চাকরি হারানোর পর হতাশায় ভুগছিল। অর্থকষ্টের কারণে তার মনে অপরাধপ্রবণতা তৈরি হয়। হত্যার দিন সে সারাদিন শহরে ঘুরে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি দোকান খুঁজে বেড়ায়। অবশেষে রুবেলের দোকানকেই লক্ষ্য বানায়।

নিহত রুবেল ছিলেন মৌলভীবাজার শহরের সুপরিচিত ব্যবসায়ী। হত্যার প্রতিবাদে শহরের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। জানাজায় অংশ নেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি করেন।

ব্যবসায়ী মহল বলছে, “দিনদুপুরে ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনা শহরের নিরাপত্তাহীনতার বড় প্রমাণ। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ড কেবল একটি ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন। হতাশা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের কারণে তরুণরা সহজেই অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সমাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সামাজিক সুরক্ষা না থাকলে এ ধরনের অপরাধ বাড়বে। তাই দ্রুত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ