যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ আর নেই

জি এম ফিরোজ উদ্দীন / রহিম রানা

চলে গেলেন যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’র লেখক খ্যাতিমান এই সাংবাদিক পাঁচ দশকের বেশি সময় সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
জানা যায়, গত কয়েকমাস ধরে তিনি হার্ট ও কিডনিজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত ২৯ আগস্ট ঢাকায় ইব্রাহিক কার্ডিয়াক হাসপাতালে অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে তার হার্টে ৩টি রিং স্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার তিনি যশোরে ফেরেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।
যশোরের প্রবীণ এই সাংবাদিকদের মরদেহ শনিবার দুপুর ১টায় নেওয়া হবে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ ময়দানে। সেখানে প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান শেষে বাদ জোহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে যশোর কারবালা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে। এর আগে শনিবার দুপুর ১২টায় প্রয়াতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ প্রেসক্লাবে রাখা হবে।
এদিকে প্রবীণ সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রেস ক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নেতৃবৃন্দ। পৃথক শোক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ’র মৃত্যুতে যশোরের সাংবাদিক সমাজ একজন গুণী সাংবাদিককে হারিয়েছেন। যার শূন্যতা কখনও পূরণ হওয়ার মতো নয়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ’র শৈশব-কৈশোর কেটেছে নওগাঁয়। সেখানে থাকতেন অগ্রজ আসফউদ্দৌলা’র কাছে। নওগাঁ কেডি স্কুলে পড়াকালীন বেজে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের দামামা। রাজনৈতিক সচেতন রুকুনউদ্দৌলাহ পরিবারের সঙ্গে চলে যান ভারতে। সেখানে শিলিগুড়িতে প্রশিক্ষণ শেষে ফ্রিডমফাইটার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ধর্ম, মানবতা, সাংবাদিকতা ছাড়া অন্য কোনো পেশায় ঢোকেননি এক মুহূর্তের জন্যেও। দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ‘দৈনিক সংবাদ’র সঙ্গে জড়িত পাঁচ দশক ধরে।
‘সংবাদ’ এ তার নিয়মিত কলাম ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’ বেশ জনপ্রিয়। তিনি চ্যানেল আই, রেডিও টুডেতে কাজ করেছেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গ, দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক রানার, দৈনিক কল্যাণ’-এ বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক যশোরের কাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন।
এ পেশায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন আইডিই পুরষ্কার, যশোর শিল্পী গোষ্ঠী পদক, জ্ঞানমেলা পদক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন বজলুর রহমান স্মৃতিপদক। তার লেখা শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’, নবযুগ প্রকাশনী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে ‘আমার কৈশোর আমার মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মানুষের ভাবনা মানুষের কথা’ এবং ‘ছোট ছোট কথা অচেনা মানুষ’, ‘পতাকার অক্ষত ভূমি’ নামে বই প্রকাশিত হয়েছে।