প্রতিনিধি 10 May 2025 , 4:28:27 প্রিন্ট সংস্করণ
মনিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি।
যশোরের মনিরামপুরের অভিশপ্ত ভবদহ পাড়ের বোরোচাষীদের বোবা কান্না যেন থামছেই না। জলাবদ্ধ বিল থেকে সেচযন্ত্র দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে দেরিতে হলেও বোরো ধান আবাদ করে কৃষকেরা ভাল ফলন পাবার আশায় বুক বেঁধেছিলো। কিন্তু তাদের সেই আশা/স্বপ্ন মাজরা পোকার আক্রমনে নিরাশায় পরিনত হয়েছে।
গাছে পাতায় ধানের বাম্পার ফলনের আশা করেছিলো কৃষকেরা। কিন্তু এখন ফসল ঘরে তুলতে ধান কর্তন করতে যেয়ে মাজরা পোকার আক্রমনে ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে অধিক মাত্রায় খরচ খরচা করে ধান আবাদ করে কাঙ্খিত ফলন না পেয়ে তারা এখন মহাচিন্তায় পড়ে গেছে। অনেকেই ধার-দেনা পরিশোধ করতে না পেরে পথে বসতে চলেছে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দী গ্রামের বোরোচাষী সঞ্জয় মল্লিক জানান, টাকার বিনিময়ে বিলের জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে ধারদেনা করে দেড় বিঘা জমিতে বোরোধান চাষ করেছিলাম। ধানের ক্ষেতে সেচ, সার ও অন্যান্য পরিচর্চা বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। ধানের গাছে পাতায় ও ফলন দেখে ভেবে ছিলাম কাঠা প্রতি দুইমন করে ফলন পাবো। খরচ বাদে বেশ লাভের আশাছিলো । কিন্তু সর্বনাশা মাজরা পোকা আমার সব শেষ করে দিয়েছে।
এখন কাঠা প্রতি ২০/২৫ কেজি ধান পাবো কী না তাই নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে মাঠ থেকে কাধে করে তিনি নিজেই ধানের বোঝা নিয়ে রাস্তায় এনে সাজাচ্ছে। কামলা কেনার টাকা তার নেই । তাই লোকশান পুষিয়ে নিতে অগত্যা কষ্ট করছেন নিজের ধান ঘরে তুলছে।
মনোহরপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছিলেন, চার বিঘা জমিতে বোরোধান আবাদ করেছি। ভাল ফলনের আশা ছিলো। কিন্তু মাজরা পোকা সেই আশায় বাধ সেজেছে। তিনি অশ্রæভারাক্রান্ত মনে বলছিলেন, অনেক টাকা ধারদেনা করে অতিকষ্টে চারবিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। গাছে পাতায় ও ফলনে কাঠা প্রতি দুইমন করে ধানের ফলনের আশা ছিলো। কিন্তু আমার সব শেষ! এখন চার বিঘায় যে ধান পাবো তা আমার বছরের চালের চাহিদা কোন রকম মিটতে পারে।
ধান আবাদ করে যে টাকা ধারদেনা তিনি হয়েছেন তা পরিশোধ করা নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। মাজরা পোকার আক্রমণে বহু কৃষকের আবাদকৃত ধানের এ ধরনের ক্ষতির কথা সরেজমিন শুক্রবার ভবদহ অঞ্চলের বিল কেদারিয়ায় যেয়ে জানা যায়।
জানা যায়, মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া,হরিদাসকাটি,নেহালপুর, মনোহরপুর, ঢাকুরিয়া, দূর্বাডাঙ্গা,খানপুর ইউনিয়নসহ ভবদহ অধ্যুষিত বিলাঞ্চলে এবার বোরো ধানের আবাদ করেছিলো কৃষকেরা। ভবদহ অঞ্চলের সবচেয়ে জলাবদ্ধতার শিকার বিল বোঁকড় ও বিল কেদারিয়া, আড়পাতার বিল,হরিণার বিল,সামন্দডাঙ্গার বিল, বিল শালিখাসহ আশপাশের জলাবদ্ধ বিলাঞ্চল থেকে সেচপাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে এবার বোরো ধানের আবাদ করে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার এক মহাউৎসবে মেতে উঠেছিলো কৃষকেরা।
উপযুক্ত আবহাওয়া ও চাষাবাদ ব্যবস্থাপনায় ভবদহ বিলাঞ্চলসহ সারা উপজেলা জুড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো। পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে নারী-পুরুষ সমানতালে ব্যস্ত হয়ে উঠে। ভাল ফলন পাবার আশায় কৃষকের চোখে মুখে তাই দেখা যায় আনন্দের হাসি!
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ভবদহ অধ্যুষিত বিলকেদারিয়ায় কৃষকেরা সেচযন্ত্র দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে অনেক দেরিতে ধানের আবাদ করেছিলো। ধানের গাছে পাতায় ও ফলনে বেশ ভালই হয়েছিলো।
কিন্তু ধান পাকতে দেরি হওয়ায় অন্যান্য বিলাঞ্চল থেকে তাদের ধান কর্তন করতে বিলম্ব হয়। এরই মধ্যে কাচা-পাকা ধানে ব্যাপকহারে মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দেয়। মাজরা পোকা দমনে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে না পারায় বহু কৃষকের দানের ক্ষেত মাজরা পোকার আক্রমনে মারাত্বক ক্ষতির শিকার হয়। মাজরা পোকার দমনে করনীয় কী তা নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিকট থেকে তেমন কোন পরামর্শ কৃষকরা পাননি বলে অভিযোগ অধিকাংশ কৃষকের।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ মাহমুদা আকতার জানান,উপজেলা কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তাদেরকে সরেজমিন যেয়ে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা প্রদানের ফলে এবার বোরো ধানের ভাল ফলন হয়েছে। কিছু এলাকায় মাজরা পোকার আক্রমণে ফলন ব্যহত হয়েছে শুনেছি। তবে সেটার পরিমাণ খুব বেশী হবে না।