অন্যান্য

যশোরে টিকটকার মাহীর আত্মহত্যা: প্রেম ও শ্রেণি-বৈষম্যের বলি?

  প্রতিনিধি 11 August 2025 , 1:03:38 প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর:

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় টিকটকার ইয়াসমিন আক্তার মাহীর (২১) রহস্যজনক আত্মহত্যা ঘিরে এখন তোলপাড় চলছে। প্রেমঘটিত জটিলতা ও প্রভাবশালী পরিবারের মানসিক চাপই তার মৃত্যুর কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২২ জুলাই) রাতে শহরের ধর্মতলা এলাকার ভাড়া ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার আগে মাহী টিকটকে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন— “ভালোবাসা বলতে কিছুই হয় না”।
এই ঘটনা কেবল একটি আত্মহত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি যেন ধনী-গরিবের দ্বন্দ্ব ও সামাজিক বৈষম্যের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। দিনমজুর বাবার মেয়ে মাহীর সঙ্গে শার্শার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে সাকিবুল হাসান বিশাল (২৪)-এর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি বিশালের পরিবার।
প্রেম ও হুমকির করুণ পরিণতি
প্রায় দেড় বছর ধরে চলে আসা এই সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে বিশালের পরিবারের পক্ষ থেকে মাহীকে সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং মাহীর বড় ভাইকে মারধরও করা হয়। মাহীর পরিবারের দাবি, বিশালের বাবা-মা, যারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী, তারা তাদের ছেলের সম্পর্ক থেকে মাহীকে সরিয়ে দিতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করেন।
পরিবারের অভিযোগ, ১৫ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বিশাল মাহীর ফ্ল্যাটে থাকলেও পরে পরিবারের চাপে সে দূরে সরে যায়। এরপর ২০ জুলাই বিশালের পরিবারের করা একটি অভিযোগের কারণে মাহীর মানসিক চাপ আরও বেড়ে যায়।
মৃত্যুর আগে শেষ কথা
আত্মহত্যার ঠিক আগে মাহী তার প্রেমিক বিশালের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। সেই কথোপকথনে তিনি তার হতাশা ও অপমানের কথা জানান। কিন্তু তার করুণ আকুতিতে কোনো সাড়া মেলেনি বলে মাহীর পরিবার দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, এটি কোনো সাধারণ আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত মানসিক নির্যাতনের ফল।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুর প্ররোচনার অভিযোগে ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের পর তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামাজিক মাধ্যমে ঝড়
টিকটকার মাহীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তার শেষ টিকটক ভিডিওটি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে। অনেকেই এই মৃত্যুকে সামাজিক বৈষম্য ও শ্রেণি-নিপীড়নের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন— এই অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?
এদিকে, অভিযুক্ত বিশালের বাবা অলিয়ার রহমান এই ঘটনায় তার ছেলের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, “আমার ছেলে এখনও ক্লাস নাইনে পড়ে।” তবে এ ঘটনার পর থেকে বিশালের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এই ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মাহীর পরিবার ন্যায়বিচারের আশায় তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে, সমাজের উঁচু শ্রেণির ক্ষমতা ও অহংকারের কাছে তাদের মেয়ের ভালোবাসার এই করুণ পরিণতি হয়েছে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ