কুমিল্লা নগরী এখন যানজটের কবলে। প্রতিদিনের এই তীব্র যানজটে সময় নষ্ট হচ্ছে, অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরজীবন। ৭ মিনিটের রাস্তা পার হতে লেগে যাচ্ছে ৩০ মিনিট, এমনকি সাইরেন বাজানো অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়ে যাচ্ছে। শহরের টমছম ব্রিজ, কান্দিরপাড়, চকবাজার, শাসনগাছা রেলগেট, রাজগঞ্জসহ প্রধান সড়কগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থবির থাকে।
এই যানজটের প্রধান কারণগুলো হলো: ফুটপাত দখল, যত্রতত্র পার্কিং, নিবন্ধনহীন ইজিবাইক এবং অপ্রশস্ত সড়ক। এই সমস্যাগুলো মিলে নগরবাসীর নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময়কার ছোট শহরের জন্য তৈরি সড়ক এখনকার বিশাল নগরীর চাপ সামলাতে পারছে না। প্রায় ৫০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা শহরে চলাচল করে, যার বড় অংশই নিবন্ধনবিহীন। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, আদালত এবং বাজার একই জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় একই সড়কে প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবীর মাসুদ বলেন, “জনসংখ্যা ও যানবাহনের বৃদ্ধি হলেও সড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি। যানজট কমাতে হলে টেকসই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ এবং দিনের বেলায় মালবাহী গাড়ি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।” কুমিল্লা মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মনে করেন, “অটোরিকশা ও নতুন বড় আকারের রিকশাগুলো ট্রাফিক আইন মানে না। এরা প্রধান সড়ক তো বটেই, বিকল্প গলিও আটকে দেয়।” ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া বলেন, “দিনের বেলায় বড় ট্রাক শহরে প্রবেশ বন্ধ করলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।” অন্যদিকে অটোরিকশা চালক ওমর ফারুক বলেন, “জনসংখ্যা বাড়ছে, গাড়ি বাড়ছে, কিন্তু রাস্তা বাড়ছে না। রাস্তা প্রশস্ত করলেই সমাধান আসবে।”
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মো. পারভেজ জানান, ট্রাফিক পুলিশের লোকবলের তীব্র সংকট রয়েছে। ৭৯ জন পুলিশ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, যেখানে অন্তত ২০০ জন ট্রাফিক সদস্য প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, “যেখানে ৮-১০ জন লোক প্রয়োজন সেখানে ২-৩ জন ট্রাফিক দিয়ে কী হয়, একদিকের যানজট শেষ করলে আরেক দিক বন্ধ হয়ে যায়।”
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, “যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি কাজ করছে। আপাতত আমরা শুধু ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাই। তবে দ্রুতই কমিটি কাজ শুরু করবে। একই সাথে যাচাই-বাছাই করে ফিটনেসবিহীন অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করার কাজ চলছে।