তোফাজ্জল ইসলাম -- সুনামগঞ্জ থেকে :
রাতভর টানা বৃষ্টির পর বুধবার ভোরে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার রাধানগরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক বিপর্যয়। মুহূর্তেই ধসে পড়ল একের পর এক ঘরবাড়ি। একরাতেই নিঃস্ব হয়ে গেলো ৭টি পরিবার। কাঁদতে কাঁদতে এক বৃদ্ধা বললেন, “ভাইরে, চোখের সামনে আমার ঘরডা নদী খাইছে। বাঁচি কই গিয়া এখন?”
রাধানগর গ্রামের একাংশে ভূমিধসের কারণে পাকা ঘর, টিনের চালা, রান্নাঘর, টয়লেট, পানির ট্যাংকিসহ সবকিছুই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, রাত ৪টা থেকে স্রোতের গতি বেড়ে যায়, আর সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ধস শুরু হয়।
ভুক্তভোগীদের হৃদয়বিদারক আর্তনাদ
ভূমিধসে সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছেন—আলী হোসেন, জয়নাল আবেদীন, জিয়াউদ্দিন (৪০), রবি আলী (৮০), আব্দুল গনি (৭০), আলম মিয়া (৫৫) ও আবুল কাশেম (৫০)। কারো ঘর ছিল পাকা, কারো আধাপাকা—তবে আজ সবাই সমান, একটুকরো জায়গাও নেই মাথা গোঁজার।
ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল গনি জানান, “আমার জীবনভর কামাই করা ঘরটা এক মিনিটে ভইরা গেল। এখন সন্তানদের লইয়া রাস্তার ধারে বসা।” ভাঙা ইটের উপর বসে থাকা নারী-শিশুর মুখে এখন শুধুই মিনতির সুর—একটা মাথার ছাউনি, দুটো শুকনো খাবার, আর একটু নিরাপত্তা।
ঘটনার পরপরই বেহেলি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “দৃশ্যটি খুবই মর্মান্তিক। ৭টি পরিবার একেবারে নদীতে চলে গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফছা বেগম বলেন, “আমি নিজে গিয়ে শুকনো খাবার দিয়েছি। কিন্তু এগুলো যথেষ্ট নয়। পানির তোড় যদি না কমে, তাহলে আশপাশের আরও ঘর পড়বে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসফিকুন নূর বলেন, “আমি প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। ঘটনাস্থলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোক পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয়রা অবিলম্বে নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।