লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনি আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐশীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে । পরিবারের দাবি, ঐশীর স্কুলের শিক্ষক মাহমুদুল ইসলাম উত্তপ্ত করার কারণেই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে আত্মহত্যার সঠিক কারণ বলতে পারছেন না কেউই।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী ) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এই বিষয়টি জানান নিহতের চাচা সাবেক চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নান্নু ।
এর আগে সোমবার রাত ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১নং উওর হামছাদী ইউনিয়নের নান্নু চেয়ারম্যানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে সকাল ১১ টার দিকে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। নিহত সাহারা হোসেন ঐশী ১নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামের সৌরভ হোসেন বিনুর মেয়ে। সে বামনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহতের চাচা ইমরান হোসেন নান্নু বলেন, "আমার ভাতিজী ঐশী খুব ভালো মেয়ে। গত ডিসেম্বর মাসে ঘরের দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করতে দেখা যায় ,পরর্বর্তীতে আমার মা তার দাদি দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলে, সে বলে তার স্কুলের শিক্ষক মাহমুদুল ইসলাম তার হাতে ধরে কি যেন বলছে, তার পর আমারা সিদ্ধান্ত নেই ঐ স্কুল থেকে তাকে নিয়ে আসবো। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি ।তিনি বলেন এখন নতুন বছর আমি ব্যস্ত আছি । এটুকুই আমি জানি। রাত আড়াইটা বাজে আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বলে ঐশী আত্মহত্যার করেছে।
নিহত ঐশীর ভাই বলেন, "আমি শুনেছি তার স্কুলের শিক্ষক মাহমুদুল ইসলাম তার হাতে ধরে বলে তোমার লেখা অনেক সুন্দর! তুমি ভালো মেধাবী । এছাড়াও ঐশীকে ব্যাট টাচ করে। আমি মনে করি সে এই দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।"
এই বিষয়ে জানতে বামনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে সপ্তম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, "আমারা অনেক সময় দেখেছি দশম শ্রেণির সাঈফ, ঐশী কে নিয়ে প্রায় সময় দেখি চারতলায় নিয়ে কথা বলে । আরো অনেক কিছু করে তা বলতে পারবোনা।"
ঐশীর সহপাঠীরা জানান," ঐশী খুব ভালো এবং সবার সাথে মিশুক। আর ও খুব মেধাবী। সকল শিক্ষক তো ওকে খুব ভালো জানতো। ধর্মীয় শিক্ষকের নামে যে অভিযোগ উঠেছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। কেউ আমাদের স্যারকে ফাঁসাচ্ছে। স্যার এমন নয়। গতকাল স্কুলে ঐশী খুব হাসিখুশী ছিল, বাড়িতে গিয়ে কেন আত্মহত্যা করেছে সেটা বলতে পারবো না। "
ঐ স্কুলের দশম শ্রেণির প্রতক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ঐশী খুব ভালো এবং মেধাবী শিক্ষার্থী। আমাদের সহপাঠী সাইফের সঙ্গে ওর রিলেশন ছিল। প্রায় সময় সাইফ ওকে বিরক্ত করতো, প্রায়ই চারতলায় ওকে নিয়ে যেত। ঐশীর আত্মহত্যার কথা শুনে সাইফ সকালে স্কুলে এসে খুব কান্না করছিল। সাইফের সঙ্গে আমরা কেউ মিশিনা। কারণ ও স্কুলে ঠিকই আসেন কিন্তু কোন ক্লাস করেননা। ওর একটা গ্রুপ আছে আলাদা ও তাদের সঙ্গে সবসময় আড্ডা দেয়। স্যারেরাতো ওর এসবের জন্য সাইফকে স্কুলে ভর্তিই নেয়নি। "
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্তী বলেন, সাঈফ স্কুলে আসে কিন্তূ ক্লাস করে না, সে সব সময় ক্লাস ফাঁকি দেয়। গতকাল ক্লাস শেষে বাড়িতে যাওয়ার পরে শুনছি সাইফের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ঐশীর পরিবার জানতে পেরে ঐশীর থেকে তার মায়ের ব্যবহৃত মোবাইলটি নিয়ে যায়, ঐশী তার মায়ের মোবাইল টা ব্যবহার করতো, ফোন নিয়ে ঐশীর পরিবার ঐশীকে বকাঝকা করছে সেজন্য রাতে দরজা বন্ধ করে ঐশী আত্মহত্যা করেছে , এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না। "
ঐ স্কুলের আরও অনেক শিক্ষার্থী বলেন, গত কয়েক মাস থেকে দেখেছি সাঈফ ঐশীর সাথে প্রায় সময় একান্তে কথা বলে । তাদের একটা সম্পর্ক আছে। আজকে সাঈফ স্কুলে আসেনি তবে ঐশীর আত্মহত্যার খবর শুনে সাইফ খুব কান্না কাটি করেছে। আমারা আর কিছু বলতে পারবোনা। আমাদের কথা কোথাও প্রকাশ করবেনা ।"
এই বিষয়ে জানতে সাইফের বাড়িতে গেলে সাইফকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মা বলেন সাঈফ বাড়িতে নাই । তার বাবার কাছে রায়পুরে রডসিমেন্টের দোকানে আছে। তার বাবার দোকানের যান তাকে পাবেন। তার মায়ের কথা মতো এই প্রতিবেদক তার বাবার কাছে আসলে সাঈফ সম্পর্কে যানতে চাইলে , তিনি বলেন সাঈফ দোকানে আসেনি, সেতো স্কুলে ।ঐশীর সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা বাহার চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে যদি অপরাধী হয় তার সাজা হবে। তবে এরই মধ্যে প্রতিবেদকের হাতে সাঈফের 01610198385 এসেছে।তবে নাম্বারে কয়েক বার কল দিলে নাম্বার বন্ধ থাকায় সাইফের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। "
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ঐ স্কুল শিক্ষক বলেন, দু'মাস আগে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। আর এখন তো ও ৭ম শ্রেণীতে পড়ে ঐ ক্লাসে আমার কোন ক্লাস নেই। আমাকে কেউ ফাঁসাচ্ছে, কেন ফাঁসাচ্ছে তা জানা নেই, তবে ঐশী খুব মেধাবী এবং ভালো শিক্ষার্থী সবসময়ই হাসিমুখে থাকতো। হঠাৎই এমন হওয়ার কারনণটা সত্যি রহস্যময়ী। "
স্কুলের দাতা সদস্য মোঃ দেলোয়ার বলেন, "স্কুলের সামনেই আমার বাড়ি, শুনছি ঐশী নামের একজন ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে কেন আত্মহত্যা করেছে সেটা বলতে পারছিনা। এ বিষয়টি কেন্দ্র করে একটি কুচক্রী মহল আমাদের স্কুলের সুনাম ক্ষুন্ন করতে একজন শিক্ষককে নিয়ে ঐশীর অপমৃত্যুকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। শিক্ষক পূর্বে এধরণের কোন ঘটনা করলে মেয়ের অবিভাবক কেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাননি। মৃত্যুের আসল রহস্য ধামাচাপা দিতেই শিক্ষককে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল। "
আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) আব্দুল মোনাফ বলেন, "মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘটের জন্য লাশ পোস্ট মেডামের জন্য পাঠানো হয়েছে। পোস্ট ম্যাডাম এ রিপোর্ট ছাড়া কোন কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে উনাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।"