সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ছোট একটি গ্রাম সোনাডাঙ্গী। সেখানে ৫০টির মতো পরিবার বসবাস করে। তবে গ্রামটিতে প্রবেশের কোনো রাস্তা নেই। তাই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির আইল দিয়ে হাটবাজার ও জেলা-উপজেলা শহরে আসা-যাওয়া করে আসছেন বাসিন্দারা।
বর্ষাকালে গ্রামটির চারপাশে পানি থৈ থৈ করে। তখন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারে না কেউ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল-মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া রাস্তা না থাকায় গ্রামের বাসিন্দারা তাদের প্রাপ্ত বয়সী ছেলে-মেয়েদের ভালো কোনো পরিবারে বিয়ে দিতে পারছেন না।
অসহায় এই গ্রামটির অবস্থান ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নে। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্ভোগের এসব তথ্য জানা গেছে। গ্রামবাসীর দাবি, গ্রামে প্রবেশের জন্য মাত্র ১০০ মিটার একটি রাস্তা নির্মাণ করে দিলেই তারা ভয়াবহ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাডাঙ্গী গ্রামে প্রবেশের জন্য কোনো রাস্তা নেই।
বর্তমানে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় গ্রামের চারপাশ কাঁদামাটির স্তূপে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দারা কৃষিপণ্য মাথায় করে ওই কাদামাটির ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে হাট-বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। কোমোলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাও কাদামাটি পার হয়ে স্কুল-মাদরাসায় যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
সোনাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা ইমামুল হক ও সেলিমা বেগম বলেন, আমাদের ছোট এই গ্রামে ৫০টি পরিবারের দুই শতাধিক সদস্য বসবাস করেন।
গ্রামে শতভাগ বিদ্যুৎ আছে। তবে গ্রামে ঢোকার কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিদিন কাদামাটি পারি দিয়ে হাট-বাজার ও উপজেলায় যেতে হয়। এ ছাড়া গ্রামে ৫০ জনের মতো স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তারাও অনেক কষ্ট করে স্কুল-মাদরাসায় যায়।
তারা আরো বলেন, এমন অবস্থায় বিশেষ করে গ্রামের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে বা কোনো গর্ভবতী নারীর সমস্যা হলে দ্রুত যে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাব, সেই সুযোগ নেই। রাস্তা না থাকায় শুধু দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে না আমাদের, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়া নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কেউ আমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে চায় না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার গ্রামে প্রবেশের একটি রাস্তা দ্রুত নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
বল্লভদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন বলেন, ‘রাস্তা না থাকায় সোনাডাঙ্গী গ্রামের মানুষ একরকম গৃহবন্দি। তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে কয়েকবার রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি হালট না থাকায় সম্ভব হয়নি। জমির মালিকরাও জমি দিতে রাজি হচ্ছে না। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।’
আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সোনাডাঙ্গী গ্রামে ঢোকার মতো সরকারি হালটও নেই। তাই রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওই এলাকার মানুষ যদি, রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি দেন তাহলে রাস্তা নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’