লিফলেট থেকে লাল গোলাপ—প্রচারে সরগরম প্রথম দিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচার শুরু করেন। প্রচার–প্রচারণায় বিকেল পর্যন্ত সরগরম ছিল ক্যাম্পাস।
বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল। এ সময় প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী মো. জাবির আহমেদ জুবেল উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে নির্বাচনী জনসংযোগ করেন। পরে ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও ক্যাম্পাস এলাকায় জনসংযোগ করেন তাঁরা।
সকালে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের প্রার্থীরা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন। পরে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, কলাভবন, মল চত্বর ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান তাঁরা।
‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল সকালে ক্যাম্পাস এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে। এই প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী হয়েছেন মো. জামাল উদ্দীন খালিদ।
একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে আছেন এজিএস প্রার্থী তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী জহিন ফেরদৌস জামি ও স্বতন্ত্র সদস্য প্রার্থী সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রার্থীরা। এ কারণে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে দুপুরের পর আবারও গণসংযোগ শুরু করেন তাঁরা। প্রচারে বেশির ভাগ প্রার্থীই লিফলেট বিতরণ করেন।
দুপুরের দিকে জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়াসহ প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা।
বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে প্রচারণার প্রথম দিনে চারুকলার ভেতরে তাঁদের দুটি প্রচার বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে প্যানেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চারুকলায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল ডাকসু নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার মাটিতে ফেলে দিয়েছে। এ ছাড়া জোটের কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী সাবিকুন নাহার তামান্নার ছবিকে বিকৃত করে ওই মহল তাঁদের পূর্বের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে একাত্তরের শহীদদের স্মৃতিফলক ‘স্মৃতি চিরন্তন’–এ শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এই প্যানেল থেকে আবিদুল ইসলাম খান ভিপি, শেখ তানভীর বারী হামিম জিএস ও তানভীর আল হাদী মায়েদ এজিএস প্রার্থী হয়েছেন।
আনুষ্ঠানিক প্রচারণা কার্যক্রম শুরুর পর ছাত্রদলের অনেক নেতা–কর্মীকে শিক্ষার্থীদের কাছে লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। এই প্যানেলের অনেককে লাল গোলাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান থেকে তৈরি হওয়া ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ডাকসু নির্বাচনে তাদের প্যানেলের নাম রেখেছে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’। বিকেলে এই প্যানেলের প্রার্থীরা কবি জসীমউদ্দীন হলের মাঠ থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের ও জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার প্রচারে অংশ নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘প্রচার–প্রচারণার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে প্যানেলগুলোর ইশতেহার প্রায় কাছাকাছি হলেও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বা স্বতন্ত্র যে পয়েন্টগুলো আছে, সেগুলো পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।’