আবু তালহা বিন মনির
পুরো বিশ্ব থমকে আছে।
সাদা-নীল আকাশ জুড়ে বিষাদের ঘনঘটা।নিশ্চল-স্থির এক পৃথিবী দেখছে মানুষ।আধুনিক যুগে এসে এমন পৃথিবী আর দেখা যায়নি।এর আগে বিশ্বব্যাপী মানুষে মানুষে সংগঠিত দুটি বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছে মানুষ।অবলিলায় ধ্বংস যজ্ঞে মত্ত হয়েছিলো পৃথিবীর হর্তাকর্তাগণ।বিশ্বের আকাশ জুড়ে উড়িয়ে দিয়েছিলো ধ্বংসের নিশানা।আধিপত্য বিস্তার,হিংসা আর ক্রোধকে নতুন জীবন দান করে পৃথিবীময় ছুড়ে দিয়েছিলো অশান্তির বাণী।পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি স্বীকৃতি পাওয়া এডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক।যার উগ্রতা সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস যজ্ঞে পরিণত করেছিলো।১৯৪৫ সালের ০৬ ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় লিটল বয় নামের নিউক্লিয় বোমা এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরে ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছিলো।বোমা দুটির ধ্বংসলীলা এত ছিলো যে এর আগে এত বড় বিস্ফোরণ বিশ্বের কোথাও ঘটেনি।উল্লেখ্য যে,নাগাসাকি শহরও জাপানে অবস্থিত।
ধারণা করা হয়,১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর এর মধ্যে এই বোমা বিস্ফোরণে শুধু হিরোশিমাতেই ১৪০,০০০ লোক মারা যায়।সেদিনের এই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ বিশ্ব মোড়লদেরও টনক নেড়ে দিয়েছিলো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আর এমন কোনো ঘটনা সংগঠিত হয়নি যা পুরো পৃথিবীকে থমকে দিতে পারে।কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান নগরী হতে উৎপত্তি হওয়া কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) ২০২০ এ পুরো বিশ্বে সংক্রমিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে।স্থির করে দিয়েছে সমগ্র মানব জাতিকে।চীন হতে ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমিত হতে হতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।ছুটে চলা,দুরন্ত আর দ্বিগবিজয়কারী মানুষদের এক নিমিষেই ঘর বন্দি করে ফেলে।পুরো বিশ্বে জারি করে দেয় বিধিনিষেধ।গোটা পৃথিবী চেয়ে যায় আতংকে।পৃথিবীর ভাগ্যাকাশে নেমে আসে আঁধার।চারদিকে ছড়িয়ে পরে শোকের মাতম।মানবজাতির আর্তনাদে ভরে উঠে পৃথিবীর সমস্ত আকাশ।প্রতি মূহুর্তে,প্রতি ক্ষণে বাতাসের সাথে আসতে থাকে মৃত্যুর মিছিল।এ এমন এক মিছিল যার সারি পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে মিশে যায়।দেশে দেশে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে লাশের সারি।যেন অঘোষিত এক যুদ্ধ।তবে এ যুদ্ধে মানুষ মানুষকে কতল করছে না।কোনো মানুষ কোথাও ছুড়ে মারছে না মিশাইল।রকেট হামলাও করছে না কেউ।প্রকৃতির কাছে হেরে গিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে লাশের সারি।
ভাবতে পারেন কি দুঃসহ,নির্মম এ দৃশ্য!যেখানে পিতা ছুঁয়ে দেখছে না সন্তানের লাশ,সন্তান ফেলে যাচ্ছে পিতা-মাতার লাশ।ভাই নিচ্ছে না ভাইয়ের মরদেহ।কি এক আতংক!
এ কি এক ভয়!!
মৃত্যুর ভয়ে অতি আপনজনেরা ফেলে যাচ্ছে প্রিয় মানুষগুলোর মরদেহ।যে মানুষ মারা গেলে ছুটে আসতো পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন।আর এ কি মৃত্যু!
এই মানুষের মৃত্যুতেই মুখ ডাকছে মানুষ।
কারো এ ভাইরাস সংক্রমণে দূর দূর করে ঠেলে দিচ্ছে।ফেলে রাখছে নিঃসঙ্গতায়।ভাবতে পারেন কি ভয়াবহ এ দৃশ্য!পিতা-মাতা আর সন্তানের অমোঘ এ মিলন ভেঙে একে অন্যকে ফেলে যাচ্ছে সবে।কেউবা কোনো রকম দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করছে শেষকৃত্য।কোথাও বা ধর্মীয় রীতি-নীতি উপেক্ষা করেই সম্পন্ন করা হয়েছে শেষকৃত্য।এমন মৃত্যু কি কাম্য ছিলো কারো!
ওয়ার্ডোমিটারস এর তথ্যমতে-৭ই জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার।আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৬ লাখ।করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত,মৃত্যু ও সুস্থতার হিসেব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ডোমিটারস থেকে পাওয়া তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা।জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৬ হাজার। আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭১ জন।এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে ভারতের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় আর মৃত্যুর দিক দিয়ে অবস্থান তৃতীয়।মহামারী শুরু থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ২৩ হাজার ৭৭০জন আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯১১ জন।লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে অবস্থান তৃতীয় এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে অবস্থান দ্বিতীয়।শুরু থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩২২ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৩০ জনের।এছাড়াও মহামারী শুরু থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত রাশিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার ৩০০ জন,মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৮১৭।যুক্তরাজ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৬৫ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৫ জন।ইতালিতে ১ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার ২৩৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ১৩ জন।জার্মানিতে ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২০৭ জন।মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো আলোচনার প্রথম সারিতে।জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮০৫ জন।
২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিবৃতিতে জানা যায়-শুরু হতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মহামারী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৩০৪ জন। এবং শুরু থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ জনে।উল্লিখিত পরিসংখ্যানে যারা ভাবছেন বাংলাদেশে করোনা মহামারী তেমন আঘাত হানতে পারেনি।২০ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ১৯ লাখ লোক আক্রান্ত।এটা ভাবার অবকাশ নেই।আর এ কারণেই নেই কারণ- এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মাত্র ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে আক্রান্ত ১৯ লাখ এর উপরে।বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে গণহারে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে আমাদের দেশে তেমনটা সম্ভব হয়নি।আর হয়নি বিধায় পরিসংখ্যান এত স্বল্প।
মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তেই থাকে।আকাশ ভারি হতে থাকে মানুষের বোবা কান্নায়।শরতের স্বচ্ছ নীল আকাশেও বইতে থাকে তুমুল ঝড়।সাদা মেঘের বদৌলতে ধেয়ে আসতে থাকে কালো মেঘ।প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে হিমশিম খায় বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ।না,কোনো