প্রতিনিধি 29 July 2025 , 5:09:32 প্রিন্ট সংস্করণ
যশোর, ২৯ জুলাই ২০২৫:
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের পরও যশোর শহরের শংকরপুর ও বাস টার্মিনাল এলাকা এখন মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাংয়ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যের যোগসাজশে এখানে প্রকাশ্যে চলছে মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি এবং ত্রাসের রাজত্ব। বিশেষ করে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের ছত্রছায়ায় এসব অপরাধী চক্র দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
‘গডফাদার’ জাহাঙ্গীরের হাতে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ
শংকরপুর বটতলা এলাকার ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর এই বিশাল মাদক নেটওয়ার্কের মূল হোতা। অভিযোগ, তিনি একটি আন্তঃজেলা মাদক সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। তার নির্দেশেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে ৫-৭ জনের একটি মাদক ডেলিভারি টিম। এই টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে চোর রোস্তমের ছেলে রিপন, বাঁতেন, মুনজিলের ছেলে আলামিন এবং আলাউদ্দিন আলার ছেলে রাজা ওরফে ‘বাবা রাজা’।
‘বাবা রাজা’র নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান
শংকরপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় ‘বাবা রাজা’-র নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী কিশোর গ্যাং। এই গ্যাং ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক পরিবহন এবং এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিতে সক্রিয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০-৫০ জন। এর মধ্যে রয়েছে জালালের ছেলে ইয়াছিন, বিপ্লব, রিপন, বাদশা, সুজন, ইমরান, সজিব সহ আরও অনেকে। এমনকি আন্তঃজেলা বাসের কিছু হেলপারও এই চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
এই এলাকায় ‘ইয়াবা সুজন’ নামে একজন শংকরপুর, বটতলা মসজিদ, মেডিকেল কলেজ এলাকা ও ছোটনের মোড়ে ইয়াবা বিক্রি করে। অন্যদিকে, ফেনসিডিল বিক্রেতা হিসেবে ‘ইমরান’ নামে একজনের নামও জানা গেছে।
প্রকাশ্যে ‘মাদক হাট’ ও রাজনৈতিক আশ্রয়!
স্থানীয়দের অভিযোগ, সিরাজুল ইসলামের চায়ের দোকানের পেছনে প্রতিদিন বসে ‘মাদক হাট’। এখানেই জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মাদকের কেনাবেচা ও নিয়ন্ত্রণ হয়। আরও গুরুতর অভিযোগ হলো, জাহাঙ্গীর একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রবাসীর বাড়ি দখল ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র মাদক কারবার নয়, আরও গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো শহরের কলেজপাড়া এলাকায় প্রবাসী নারী শাহনাজের বাড়ি তালা ভেঙে দখল করে নেওয়া। শুধু তাই নয়, তাকে নারী পাচার মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করার অভিযোগও রয়েছে। ভুক্তভোগীর দাবি, প্রথমে ২০ হাজার এবং পরে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
পুলিশের বক্তব্য: ‘আমরা মনিটর করছি, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’
এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, “এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা কৌশলে জামিনে বের হয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি আমরা মনিটর করছি এবং দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যদি কোনো পুলিশ সদস্য মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন, পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এই অপরাধীরা দিনের পর দিন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে? সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, শুধু মামলা বা আটকের মধ্যেই যেন পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং এই ‘গডফাদার’ এবং তাদের সহযোগীদের মূল উৎপাটন করা হোক, এবং পুলিশের ভেতরের দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।