অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার কিংবা আন্দোলনের হুমকি দেওয়ার মানসিকতা শেখ হাসিনার চিন্তার প্রতিফলন। এর থেকে বোঝা যায়, শেখ হাসিনা কিছু কিছু খুদে স্বৈরাচার রেখে গেছেন বাংলাদেশে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সংস্কার প্রস্তাবে সব দলের ঐক্যমত্য হওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যারা জনগণের ওপর আস্থা রাখবে না, কিন্তু তাদের দাবি মানতে হবে! না মানলে কী হবে?
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘আবার বলছে গণভোট দিতে হবে, ভালো কথা। আপনার দাবির ওপর যদি গণভোট দিতে হয়, তো আমার দাবির ওপর আরেকটা গণভোট হোক। আরও ১০টা দলের আরও ১০টা দাবি আছে; সবার দাবির ওপর গণভোট হোক। তো বাংলাদেশে জীবনে আর নির্বাচন হবে না।’
ঐকমত্য না হওয়া বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘আপনার জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ, আরেকটি দলের জন্য সেটা গুরুত্বপূর্ণ না–ও হতে পারে। সুতরাং ঐকমত্য যতটুকু হবে, সেটাকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। আর এর বাইরে প্রতিটি দলের ঐকমত্যের মধ্যে যেগুলো আসবে না, সেগুলো আগামী নির্বাচনে তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যাক। জনগণ থেকে সমর্থন নিয়ে সেটা সংসদে এসে পাস করুক। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।’
অভ্যুত্থান–উত্তর যেসব দেশ দ্রুত সময়ে গণতান্ত্রিক সরকারে ফিরে গেছে, তারা ভালো করছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যেসব দেশে বিপ্লব–উত্তর এ ধরনের একটা নিজেদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চলছে, সেই দেশগুলোয় এখন গৃহযুদ্ধ চলছে। সেই দেশগুলোয় এখন সবাই বিভক্ত। সেই দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে।’
এ সময় দেশের যেসব নাগরিক চাকরি থেকে অবসরে গেছেন, বিএনপি তাঁদেরও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘কোনো গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে অর্থনীতি চালানো যাবে না। অর্থনীতি সবার জন্য হতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক যাতে এই অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে।’
এ সময় দেশে নিবন্ধনবিহীন অনেক রাজনৈতিক দল সরকারি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু। তিনি বলেন, যারা প্রকৃত বঞ্চিত, সরকারে তাদের কোনো জায়গা হচ্ছে না।
মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষে ছিল উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকেও তারা পিআরের (নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) দাবি তুলে বাংলাদেশকে বিভক্ত করতে চায়। এই জুলাই বিপ্লবকে বিভক্ত করতে চায়।
জামায়াত পিআরের দাবি তুলে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে চায় বলেও অভিযোগ করেন বরকতউল্লা বুলু। তিনি বলেন, পিআর কী, এটা দেশের মানুষ চেনে না। এটা গায়ে দেয়, না খায়, না মাখে— এটাও জানে না বাংলাদেশের মানুষ।
জন অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম, চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।