ফয়সাল হায়দার,
স্টাফ রিপোর্টার।
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একের পর এক বিরল প্রজাতির প্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীরা খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে লোকালয়ে আশ্রয় নিতে এলে তারা স্থানীয়দের হিংস্রতার শিকার হচ্ছে। অথচ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।
ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ,
গত জুনে শৈলকুপার হাকিমপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে খাবারের খোঁজে একটি বিলুপ্তপ্রায় কুমির লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। আশ্রয় না পেয়ে প্রাণীটি স্থানীয় জনতার হাতে পিটিয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার এক মাসের মধ্যেই গড়াই নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে আরেকটি শুশুক। আহত অবস্থায় সেটিকে চিকিৎসা না দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সর্বশেষ শৈলকুপা পৌরসভার সাতগাছিতে ঘটে আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ধানক্ষেতে আশ্রয় নেওয়া একটি মেছোবাঘ ধান কাটার মেশিনে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। একের পর এক এ ধরনের হত্যাযজ্ঞে স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আইন আছে, প্রয়োগ নেই,
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১২ সালে প্রণীত হয়েছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন। আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী কুমির, শুশুক ও মেছোবাঘ সংরক্ষিত প্রাণী। এদের হত্যা বা ক্ষতিসাধন করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তি আরও বাড়িয়ে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
কিন্তু এ আইন থাকার পরও প্রকাশ্যে বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনায় কোনো শাস্তির নজির নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—আইনের কার্যকারিতা কোথায়?
পরিবেশবিদরা বলছেন, বন্যপ্রাণীর প্রতি মানুষের অজ্ঞতা, ভালোবাসার অভাব এবং আইনি পদক্ষেপের শিথিলতার কারণে অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতনতা না বাড়ালে এবং আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করলে শৈলকুপা থেকে বিরল প্রজাতির প্রাণীরা একসময় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। না হলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।