অন্যান্য

শ্যামনগরে অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত, লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নষ্ট হচ্ছে নারী ও যুবসমাজ

  প্রতিনিধি 5 December 2024 , 5:52:55 প্রিন্ট সংস্করণ

মো: সোহাগ সরদার:

★প্রশাসন ম্যানেজ করেই চালাচ্ছেন এই ভয়ংকার অনলাইন জুয়া, এমনটা জানিয়েছেন অনলাইন জুয়ার মাষ্টার এজেন্ট জুয়া হাফিজ

★নারীদেরকে দিয়েই অনলাইন জোয়ার সাব এজেন্ট নিরাপদ, জানিয়েছেন অনলাইন জোয়ার মাষ্টার এজেন্ট

★প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নষ্ট হচ্ছে নারী ও যুবসমাজ

বিস্তারিত দেখুন সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে ফিরে সোহাগ সরদারের ধারাবাহিক তিন পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে

সাতক্ষীরা শ্যামনগরে অনলাইন জুয়া মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে গোটা শ্যামনগর জুড়ে অনলাইন জুয়া ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এতে আসক্ত হচ্ছেন, বেশি আসক্ত হচ্ছেন হাইস্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তরুণরা। অনলাইন জুয়ার ভয়াল থাবায় ধসে যাচ্ছে সাজানো সংসার, পরিবার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,গোটা দেশজুড়ে অনলাইন জুয়া ছড়িয়ে পড়লেও সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এই জুয়া বিস্তার লাভ করেছে। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ এই জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন, তরুণদের অনেকেই কৌতুহলবশত এই খেলা শুরুর পর নেশায় পড়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী এক সময়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

আর এসব বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে ছদ্মবেশে সাংবাদিক কথা বলেছে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার ১০ নম্বর আটুলিয়া ইউনিয়নের অনলাইন জোয়ার মাস্টার এজেন্ট মোঃ হাফিজ ওরফে জুয়া হাফিজ এর সঙ্গে,অনলাইন জুয়ার মাস্টার এজেন্ট জুয়া হাফিজ বলেন, আমি সাব এজেন্টদের প্রশাসনিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশাসন ম্যানেজ করেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এ নেশাই আসক্ত করে আজ আমি দিনমজুর থেকে কোটিপতি হয়েছি, জুয়া হাফিজ বলেন তার নিজেরই আন্ডারে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন সাব এজেন্ট তার হয়ে নিয়মিত কাজ করছে।

অনলাইন জুয়ার মাস্টার এজেন্ট জুয়া হাফিজের সঙ্গে কথা বলে আরো জানাযায়, স্মার্টফোনে নির্ধারিত কয়েকটি অ্যাপস ডাউনলোড করে সেখানে জুয়া খেলা চলে। বিভিন্ন নামের প্রায় ১০ থেকে ১২টি অ্যাপসে সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলা হয়। এসব অ্যাপসে ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়। অ্যাপসগুলোর বেশির ভাগই পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে জানিয়েছেন জুয়া হাফিজ।

জুয়া হাফিজ বলেন বাংলাদেশে এগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধি (এজেন্ট) রয়েছেন। বিভিন্ন এলাকার প্রায় বাজারেই রয়েছেন সাব এজেন্ট, নারীদের দিয়েই সাব এজেন্ট পরিচালনা করা নিরাপদ বলে মন্তব্য করেছেন জুয়া হাফিজ নিজেই,
আর এইসব এজেন্টরাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে আমাদের মত মাস্টার এজেন্টদের ব্যাংকে জমা করে। আর মাস্টার এজেন্টরা বিদেশি অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে হাজারে কমপক্ষে ৪০ টাকা কমিশনের মাধ্যমেই বিদেশে টাকা পাচার করে।

জুয়া হাফিজ আরো বলেন অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিরা এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা করলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেনা,নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমে ৫০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ হাজার টাকা পান, তিনি এতে লোভে পড়ে এই খেলায় মারাত্মক আসক্তি হয়ে পড়েন, এই জুয়ার নেশায় পড়ে ছয় মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি সহ নিঃস্ব হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংবাদ কর্মীদের।

সাতক্ষীরা শ্যামনগরের কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ , হরিনগর, গ্যারেজ, ও নওয়াবেকি বাজারে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার দোকান, ভবন, গাছতলা কিংবা সড়কের বিভিন্ন স্থানে দিনের প্রায় সব সময়ই দেখা মেলে এ রকম দলবদ্ধ কিশোর-তরুণদের, এসব জায়গায় নিয়মিতই অনলাইন গেম ও জুয়ার আসর বসে।

  1. এ ব্যাপারে জুয়া হাফিজ স্বয়ং নিজেই অনলাইন জুয়ার বিস্তারের দায়ী তার মত এজেন্টদেরই করেন,জুয়া হাফিজ নিজেই বলেন অনলাইন জুয়া খেলোয়াড়দের ধ্বংস নিশ্চিত, তবে মাস্টার এজেন্ট বা সাব এজেন্টের কোন লস নেই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জুয়া হাফিজ প্রশাসন এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছে, সে বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির এর নিকট জানতে চাইলে,তিনি বলেন অভিযুক্ত জুয়া হাফিজ যে অভিযোগ তুলছে এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই তবে আপনারা নিউজ করলে অবশ্যই প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেব,এ ব্যাপারে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, জুয়ার স্থানীয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়, তবে এমন অভিযান প্রতি সপ্তাহে চালানো দরকার বলে স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেন।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ