শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিএনপির নেতার নেতৃত্বে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গভীররাতে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে ঝাড়ু বিক্রেতার একমাত্র সম্বল গাভী বিক্রি করে ঘুষ নিলেন সমাজপতিরা। রাতের আঁধারে সালিশ ডেকে একমাত্র সম্বল গরুটি ঠেকাতে সমাজ পতিদের হাতে পায়ে ধরেও শেষ সম্বল রক্ষা করতে পারেনি ঝাড়ু বিক্রেতা। একমাত্র সম্বল ঠেকাতে রাতভর লুটিয়ে কেঁদেও শেষ সম্বল রক্ষা করতে পারেনি ঝাড়ু বিক্রেতার স্ত্রী জামেলা খাতুন। বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিছে ইউনিয়ন বিএনপি।গত ২৭ অক্টোবর রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামের তারকাঁটা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী মুন্সি (৬৫) উপজেলার গলদাপাড়া গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে। তিনি বন থেকে ছন কুড়িয়ে ঝাড়ু তৈরি করে বিক্রি করেন।অভিযুক্ত মো. বাবলু (৫০) শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী মুন্সি বলেন, গত রবিবার রাতে আমার এক আত্নীয় আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। এসময় হঠাৎ করে স্থানীয় বিএনপির নেতা বাবলুর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোকজন এসে বলে আমার বাড়িতে অবৈধ কাজ হয়। এরপর রাত ১১ টার দিকে ওরা আমাকে জোরপূর্বক তুলে নেয় স্থানীয় তারকাঁটা বাজারে। এসময় আমাকে লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে করতে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে বাজারে বসিয়ে রেখে বাড়িতে গোয়ালঘরে বেধে রাখা একমাত্র সম্বল গাভী গরু নিয়ে আসে। গাভী গরু এনে বেপারী ডেকে বিক্রি করে ঘুষের টাকা নেয়। আমি অনেক কান্নাকাটি হাতে পায়ে ধরেও একমাত্র সম্বল গাভী রক্ষা করতে পারিনা। ওরা আমাকে যে পরিমাণ মারধর করছে বলে বুঝাতে পারবো না। তিনি আরও জানান, আপনারা দেখেন আমার পড়নে কি পড়ে আছি। বন থেকে ছন কুড়িয়ে ঝাড়ু তৈরি করে সেগুলো বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আজ আমার গোয়ালঘর খালি পড়ে আছে। ওদের ভয়ে আমি বিচার চাইতে সাহস পাচ্ছি না। গরীব মানুষ বলে আল্লাহ কাছে বিচার দিলাম।ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী মুন্সির স্ত্রী জামেনা খাতুন বলেন, রাত ১১ টার সময় বেশ কয়েকজন লোক এসে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার স্বামীকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন এসে গোয়ালঘর থেকে এরকমাত্র সম্বল গাভী নিয়ে রওনা হয়। আমি তাদের হাতপা ধরে গরু রক্ষা করতে পারি না। সারারাত আমি বাড়ির উঠানে লুটিয়ে কান্নাকাটি করেও গরু রক্ষা করতে পারি নাই। আমার স্বামীর উপর নির্যাতন বন্ধ করতে পারি নাই। ওরা আমার স্বামীকে নির্মম ভাবে কুকুরের মতো মারধর করছে। ওরা আমার হাতে গরু বিক্রির ছয় হাজার টাকা দিয়ে যায়। গরু কত টাকা বিক্রি করছে এসবের কিছুই আমি জানি না।গরুর বেপারী ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ি এবং ঘটনাস্থল পাশাপাশি হওয়ায় আনাকে ডেকে নেয়। আমি বাজারমূল্য হিসেবে গরু কিনছি, এর বেশি বলতে পারবো না।অভিযুক্ত কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বাবলুকে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল হক মন্ডল বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে আমাদের বিএনপির নজরে এসেছে। এবিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান