অন্যান্য

শ্রীপুর মডেল থানায় হাসিনা-কাদেরসহ ৩৩৪জনের নামে মামলা, বিএনপি নেতাসহ মৃত ব্যক্তিও আসামী

  প্রতিনিধি 27 February 2025 , 5:45:58 প্রিন্ট সংস্করণ

 

বিশেষ প্রতিনিধি, মোঃ মিন্টু:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহতের ঘটনার ৬মাস পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ ৩৩৪জনের নাম উল্লেখ করে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

 

 

গত ২০ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার শ্রীপুর থানায় মামলায় রেকর্ডভুক্ত হয়। দীর্ঘদিন পর ও যাচাই বাছাই ছাড়া মৃত ব্যক্তি ও তিনজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ করে মামলা রেকর্ডভুক্ত করায় এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরী হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে চলছে আলোচনা সমালোচনা।

 

 

মামলার বাদী মোসা: মুর্শিদা খাতুনের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার নলুয়াপাড়া গ্রামে। গত ৫ আগস্ট মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে বিজিবি-জনতা সংঘর্ষে প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন মামলা বাদী মুর্শিদার ছেলে মাসুম বিল্লাহ্।

 

এ মামলায় টেংরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক, তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী মনসুর মানিক, উত্তর পেলাইদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ও জৈনাবাজারের আব্দুল আউয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান খোকন সরকার, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শেখ ওমর ফারুকের নামও মামলায় রয়েছে।

 

 

এ মামলায় ২৫৩ নং আসামী হারুন মোড়ল। তিনি গত বছরের ১৩ই ডিসেম্বর রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াবন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বড় মেয়ে জান্নাতুন নাহার। তিনি উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমান মোড়লের ছেলে ও মাওনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান হারুন। মৃত ব্যক্তিকে আসামি করায় তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

মৃত আসামির হারুন মোড়লের মেয়ে জান্নাতুল বলেন, ‘আমার আব্বু জীবিত থাকতেও কারও সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। মামলা যেহেতু হয়েছে, পুলিশ এসে কবর খুঁড়ে বাবাকে গ্রেপ্তার করুক।’

 

এসব বিষয়ে মামলার বাদী মোসা. মোর্শেদা খাতুন বলেন,’ কয়েকজন অভিযোগ লিখে আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে সই নিয়েছে। মামলার আসামিদের কাউকে আমি চিনিনা। মৃত ব্যক্তির নামে মামলা হইছে এটা আমার জানা ছিল না। এমন হয়ে থাকলে তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে।’

 

মামলার ৭৮ নং আসামী শ্রীপুরের আব্দুল আউয়াল ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান খোকন বলেন,’ শুধুমাত্র গ্রুপিং দ্বন্দ্বের কারনে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। আমি বিগত সময়ে বিএনপির ডাকে আন্দোলন সংগ্রাম সক্রিয় ছিলাম। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের সময়ও খাবার ও চিকিৎসাসহ সবসময়ই পাশে ছিলাম।’

 

মামলার আরেক আসামী শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছাসেবক দল করি বলে আওয়ামী লীগ আমলে ৩ টি রাজনৈতিক মামলা খেয়েছি। দুধের শিশু রেখে ৮ মাস পালিয়ে বেড়িয়েছি। এখন আবার মিথ্যা মামলা দেয়। আমার দোষ কী..?

 

এবিষয়ে গাজীপুর বারের আইনজীবি অ্যাড. হাবিবুর রহমান বলেন, ফৌজদারে আইন মামলা দায়েরের আগে বিধি অনুসারে অবশ্যই পুলিশ তদন্ত করবে।মামলায় মৃত ব্যক্তি নাম থাকলে তা অবশ্যই পুলিশের গাফিলতি আর অদক্ষতা। এছাড়াও নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করাও সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’

 

 

এবিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন,’৩৩৪জনের নাম দিয়ে বাদী আবেদন করেছে। আসামি বেশী থাকায় মামলার আগে যাচাই বাছাই শেষ করা সম্ভব হয়নি। কাকে অভিযুক্ত করা হবে সেটা বাদি জানে। মামলার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বিনা দোষে যদি আসামী করা হয় তাঁকে বাদ দিয়ে অবশ্যই চুড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রেরণ করা হবে। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া হবে।

 

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট বিজিবি সদস্যদের বহনকারী কয়েকটি বাসগুলো মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হয়। ছাত্র-জনতার মধ্যে ছড়িয়ে পরে, এ বিজিবি সদস্যদের দিয়ে ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন হটানো হবে। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এসময় মামলার আসামীগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিজিবি’র সাথে থাকা অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, এতে তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভালুকা জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার কয়েকদিন পর ৩৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দেন নিহতের মা মুর্শিদা বেগম।

 

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ