অন্যান্য

সংস্কারে সেজেছে রবীন্দ্রনাথের কাছারি বাড়ি, বাড়ছে পর্যটক আকর্ষণ

  প্রতিনিধি 11 November 2024 , 11:53:43 প্রিন্ট সংস্করণ

 

উজ্জ্বল মাহমুদ, কুষ্টিয়া:

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি বাঙালির মনে ঐতিহাসিক মর্যাদা অর্জন করেছে। তবে কুঠিবাড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরেই কবির স্মৃতি বিজড়িত আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান, ‘কাছারি বাড়ি,’ যুগের পর যুগ ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কারকাজের মাধ্যমে এই কাছারি বাড়ি নতুন রূপে ফিরেছে। সংস্কারের পর কাছারি বাড়িটি যেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে নতুন জীবন দিয়েছে।

১১ নভেম্বর সোমবার সকালে সরোজমিনে যেয়ে এসবচিত্র দেখা মেলে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও স্থাপত্যশৈলী

কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কশবা গ্রামে পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত কাছারি বাড়ি এক বিশিষ্ট স্থাপনা। দক্ষিণমুখী দুই তলা এই ভবনের দৈর্ঘ্য ১৯.৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৯ মিটার। এর দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় এক মিটার, এবং নিচতলায় চারটি কক্ষ ও লম্বা বারান্দা রয়েছে। সেগমেন্টাল খিলান এবং টুস্কান স্তম্ভের গঠনশৈলী বাড়ির স্থাপত্যে সৌন্দর্য যোগ করেছে। ভবনের নির্মাণে পোড়া ইট, চুন, বালি, লোহা ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ছাদবিহীন বারান্দা এবং সামনের দিকে ছোট একটি প্রাচীর রয়েছে।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়ি

১৮০৭ সালে কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এই অঞ্চলের জমিদারি লাভ করেন। পরে ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে অবস্থান করে এই কাছারি বাড়ি থেকে জমিদারি পরিচালনা করেন। এখান থেকেই তিনি পূর্ববঙ্গের শাহাজাদপুর ও পতিসরে যাতায়াত করতেন। জমিদারির সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম এই কাছারি বাড়িতে সম্পন্ন হতো, যা কবির জন্য এক অনন্য কর্মস্থল হয়ে উঠেছিল।

 

সম্প্রতি সংস্কার কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কাছারি বাড়িটির সংস্কারে ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। সংস্কার কার্যক্রমে বাড়ির দেয়ালে নতুন প্রলেপ দেওয়া হয়েছে, ধসে যাওয়া ছাদ মেরামত করা হয়েছে এবং সামগ্রিক স্থাপত্যিক সৌন্দর্য রক্ষায় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছে।

 

শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কাস্টাডিয়ান আল আমীন জানান, বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে বাড়িটির মাত্র ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। তবে কাছারি বাড়ির সামনের বিশাল খোলা জায়গাটি জেলা প্রশাসনের অধীনে রয়ে গেছে, এবং এটি অধিগ্রহণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এই জমিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এলে কাছারি বাড়িটি আরও পর্যটকবান্ধব করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া ও পর্যটকদের আকর্ষণ

কাছারি বাড়িটি দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকলেও নতুন করে সংস্কারের পর দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা বাড়িটি দেখতে আসছেন।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ইনতাজ আলী জানান, আগে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বাড়িটি এখন পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শীতের সময় কুঠিবাড়ির পাশাপাশি কাছারি বাড়িতেও পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে স্থানীয়রা আশাবাদী।

 

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং রবীন্দ্র গবেষক সরওয়ার মুর্শেদ বলেন, “কাছারি বাড়ির সংস্কার কার্যক্রম দেখে আনন্দিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি বাঙালি জাতির জন্য একটি অপরিসীম সম্পদ। এটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

 

জেলা প্রশাসনের ভূমিকা ও পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে কুষ্টিয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, কাছারি বাড়ির আশপাশের জমি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, তা খতিয়ে দেখে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন আশা প্রকাশ করেছে যে, এই জমি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এলে কাছারি বাড়িটিকে পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি, চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ করে কুঠিবাড়ির মতো প্রদর্শনী টিকিট চালুর মাধ্যমে কাছারি বাড়ির স্থাপত্য এবং রবীন্দ্র স্মৃতিকে দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা হবে।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ