প্রতিনিধি 2 March 2025 , 9:55:58 প্রিন্ট সংস্করণ
বালী তাইফুর রহমান তূর্য
জুলাই গন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের রোগ সারানোর প্রচেষ্টা বা সংস্কার প্রস্তাব চলমান রয়েছে।সেই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশনও গঠিত হয়েছে,যার মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনও রয়েছে।কমিশনগুলো নানান প্রস্তাব তুলে ধরলেও সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ধোয়াশা রয়েই গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যর কারনে।এক দল বলছে আগে নির্বাচন প্রয়োজন, আরেকদল বলছে আগে সংস্কার প্রয়োজন।সেই সকল তর্কের বাইরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশের বিচারিক কার্যক্রম,ব্যবস্থা,প্রচলিত ধারা,ধারণা সব কিছুতেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বা সংস্কার খুবই প্রয়োজন।
রাজনৈতিক মামলা,মিথ্যা মামলা,বিচার প্রকৃয়ার দীর্ঘ পথ,বিচার ছাড়াও বছরের পর বছর জেলে পরে থাকা,গুরুতর অপরাধেও জামিন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এদেশে অহরহ।
আবার,বড় উকিলের হাতে ফাইল দিতে পারলেই মামলার রায় পক্ষে পাওয়ার ধারণাটাও এই দেশে প্রচলিত ওপেন সিক্রেট।প্রায়ই শোনা যায় দশ বছর বারো বছর জেল খাটার পরে প্রমানিত হয় সে নির্দোষ।অথবা দশ বছর পরে সাজা হয় কয়েক মাস।কিন্তু এই দীর্ঘ সময় আদালতের বারান্দায় আর জেল খানাতেও জীবনের মূল্যবান সময় অনেকেরই বিনা অপরাধেও অপচয় হয়ে যায় অপচয় হয় রোজগার করা ভাতের পয়সাও।দুর্ভোগ পোহায় নিরপরাধ স্ত্রী সন্তান।দুনিয়ার সল্প জীবনের মূল যৌবন পচে যায় কারাগারে।অপরাধীর শাস্তি হতেই হবে,তবে সেখান থেকেও রাস্ট্রের কিছু আয় করিয়ে নেয়া প্রয়োজন।কয়েদির খানাও তো রাস্ট্রের পয়সায় কিনতে হয়।তাহলে রাস্ট্র কেন তাদের দ্বারা আয়ের পথ বের করবে না।
আবার রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হলেই সরকারি দলের সব মামলায় খালাস,বিরোধী দলের জন্য আবার নতুন করে জেল খানার খাবার শুরু হয়।তরুন নেতারা গদি ছেড়ে জেলে ঢুকে চুল পাকিয়ে বের হয়ে ফের গদিতে ওঠেন একদিন।যদি বিচার বিভাগ প্রভাবমুক্তই হয় তাহলে বিচারে এধরণের তফাৎ কেন।তাহলে প্রশ্ন তো থেকেই যায়।একেবারেই সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো যদি পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখবেন সাবেক স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফজ্জামান বাবর সেই তরুন বয়সে ঢুকলেন আর সতেরো বছর পরে খালাস পেয়ে বের হলেন।আবার সাবেক ডাক,টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঢুকেছেন কারাগারে,তিনিও হয়তো আবার একদিন খালাস নিয়ে বের হবেন কারাগার থেকে।কারাবাস করলে নেতাদের পদ পদবি ভারী হয়,মানুষ গর্ব করে বলে কারাবরনকারী নেতা।আর ছিচকে চোরের কারাবাসে বউটাও চলে যায় অন্যের সাথে।অর্থাৎ রাজনৈতিক মামলাগুলো অনেক সময়ই স্রেফ বিরোধিতা দমানোর শান্তি খোজার অপশন হিসেবে চালু হয়ে এসেছে।কিন্তু এইসব মামলায় অনেক পাতি নেতা বা মফস্বলের অনেকে ফেসে যান,ভোগেন বছরের পর বছর।আর সেইসব পাতি নেতাদের স্ত্রী, সন্তান পরিবারের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।এই ধারটি বন্ধ হওয়া উচিৎ,অপরাধীর কঠিন শাস্তি হোক,কিন্তু নিরপরাধও কেউ কারাভোগ না করুক।
ধর্ষক,খুনি,মাদক কারবারি সবাই জামিন পেয়ে যায়।আবার বিনা অপরাধেও মিথ্যা অভিযোগে অনেকে কারাভোগ করে আসছেন এরকম উদাহরণও আছে অনেক।তাহলে আইনের প্রয়োগ,বিচার বিভাগেও কি সংস্কার প্রয়োজন নয়?..
অনেক সময় দেখা যায় মামলার আসামী জামিনে বেরিয়ে বাদীকেই হুমকি দেয় বা হামলাও করে।আবার অনেকেই লঘু অপরাধের কারনেও জামিন না পেয়ে জেলে পচে।একেকটি মামলার রায়,আপীল,রায় চূড়ান্ত হতে দুই দশক পর্যন্ত লেগে যায়।অর্থাৎ অভিযোগ মিথ্যা হলেও নির্দোষ প্রমানেই জীবনের মূল্যবান সময় অপচয় হয়ে যায়।যারা আবার রাজনৈতিক কারনে মামলার স্বীকার হন তাদের পরিবারগুলোরও ভোগান্তির শেষ থাকে না।যেসকল অপরাধ প্রকাশ্য দিবালোকের মত পরিস্কার সেগুলো প্রমান হতেও আদালতে যুগ লেগে যায়।অর্থাৎ পুরো প্রকৃয়ারই সংস্কার প্রয়োজন।
বিচার কাজ শুরু করে বিচার বিভাগ,তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ,আর এতেই ফের ওঠে যত অনিয়মের অভিযোগ।দেশে একটা ওপেন সিক্রেট হলো পয়সা দিলেই তদন্ত রিপোর্ট মনের মতো পাওয়া যায় অনেক সময়।যার পয়সা বেশি তদন্তও তার পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এমন উদাহরণ অভাব নেই।তবে সত্যি প্রতিবেদন যে দেয়না তাও একেবারেই নয়।আবার লঘু অপরাধীদের অভিযোগ পত্র থেকে দ্বায়মুক্তি দিতেও এক বিশাল পয়সার কারবার যে প্রচলিত আছে তাও কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।অনেক ক্ষেত্রেই বিচারক হয়তো জানতেও পারেন না তার টেবিলে জমা হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকৃতপক্ষে কতটা সত্য।
আইনজীবীরা যুক্তি তর্ক করেন তাদের মক্কেলের পক্ষে।মক্কেল আসল অপরাধী হলেও তার যুক্তি নিরপরাধ প্রমানের জন্যই দাঁড়ায় সেখানে,অনেক সময় জিতেও যায়।এখানেও মানুষ বিচারপ্রার্থী হিসেবে প্রভাবশালী আইনজীবী খোজে।কে রাজনৈতিকভাবে কতটা প্রভাবশালী,যে যত প্রভাবশালী তার ফিশ বেশি হলেও মামলার ভিরও তার কাছেই বেশি।মানুষের মনে একটা ধারনাই হয়ে গেছে অমুক বড় উকিলের কাছে গেলেই জামিন হবে।মামলায় জেতা যাবে।অর্থাৎ জনমনে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে যে অপরাধ যেমনই হোক বিচার কাজে প্রভাবশালীদের কিছু প্রভাব থাকেই।
আর এদেশের আরেক অদ্ভুত প্রচলন একজন আরেকজনের নামে শত্রুতামূলক মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানির ষড়যন্ত্র।এই ব্যাধিটি একেবারে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত।যারফলে আদালতেও বারে মামলা জট,অপচয় হয় অর্থ এবং সময়।চিরতরে বন্ধ হওয়া উচিৎ এই মিথ্যা মামলার প্রচলন।আর এক্ষেত্রে বাদীকে কঠোর শাস্তির বিধান অধিকতর প্রয়োগ করলেই শায়েস্তা হবে এসব দুষ্ট লোক।
অর্থাৎ এই খাতটিও সংস্কার করা অতি জরুরি। যাতে আইনের নামে কাউকে হয়রানি হতে না হয়।স্বচ্ছ,সঠিক বিচার হবে দেশে।