প্রতিনিধি 10 August 2025 , 6:17:25 প্রিন্ট সংস্করণ
জি এম ফিরোজ উদ্দীন (যশোর): বর্ষার এই মৌসুমে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির আকাশছোঁয়া দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে বাঙালির জাতীয় ফুল শাপলা। বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম যখন হু হু করে বাড়ছে, তখন কম দামে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এই সবজিটি হাতের নাগালে থাকায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুরসহ গোটা যশোর জেলায় এখন শাপলা ঘিরে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ভবদহ এলাকার বিলঝিলগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রির ওপর নির্ভর করে শত শত পরিবারের জীবন-জীবিকা চলছে। বছরের এই চার থেকে পাঁচ মাস যখন কৃষিজমি পানির নিচে থাকে, তখন কৃষকের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকে না। এই সময়টুকুতে তারা পুঁজি ছাড়াই বিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন।
জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম শাপলা
মনোহরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দয়াল জানান, তিনি প্রতিদিন নৌকা নিয়ে বিল থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মুঠো শাপলা সংগ্রহ করেন। এরপর তা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিন শেষে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন, যা দিয়ে তার সংসার চলে। বটিয়াঘাটার ভ্যানচালক মো. নুর ইসলাম বলেন, “অনেকদিন হলো রাস্তায় তেমন ভাড়াপাতি নেই। তাই শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে একমুঠো শাপলা ১৪/১৫ টাকা দরে কিনে ২০/২৫ টাকায় বিক্রি করি। এতে কোনোমতে সংসার চলছে।”
কম দামে পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি
মনোহরপুরের পাইকারি বিক্রেতা অজিত রায় জানান, তিনি প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মুঠো শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে গ্রামে গ্রামে ও হাটে-বাজারে বিক্রি করেন। ক্রেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, সবজির দামের ঊর্ধ্বগতিতে শাপলাই তাদের ভরসা। একজন ক্রেতা বলেন, “বাজারের সব তরকারির দাম এত বেশি যে, এখন শুধু শাপলাই কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। হাতে টাকা কম, তাই ৫ মুঠো শাপলা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”
শাপলা কেবল কম দামের জন্যই জনপ্রিয় নয়, এর ভাজি বা মাছের সঙ্গে রান্না করা তরকারির স্বাদও অসাধারণ। অল্প মসলায় এবং কম সময়ে রান্না করা যায় বলে এটি সব বয়সী মানুষের কাছেই পছন্দের। বর্ষার মৌসুমে শাপলার এই জনপ্রিয়তা একদিকে যেমন নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের উৎস তৈরি করেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের খাদ্যতালিকায় একটি সুস্বাদু এবং সাশ্রয়ী সবজি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।