প্রতিনিধি 25 July 2025 , 1:01:10 প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০২৫: উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবার বৃষ্টিপাতের মাত্রা ও তীব্রতা আরও বাড়তে পারে এবং এই প্রবণতা জুলাই মাসের বাকি দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা, জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা অতি ভারি বর্ষণের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া কুমিল্লায় ১১৪ মিলিমিটার এবং ভোলায় ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল থেকে তাপপ্রবাহ বিদায় নিলেও, রংপুর বিভাগে আজও মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড) ছিল।
সমুদ্রবন্দরগুলোতে সতর্কতা ও ভূমিধসের আশঙ্কা
দেশের সকল সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।
নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতি
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ফেনী জেলার মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এটি আগামী তিন দিন (২৭ জুলাই পর্যন্ত) অব্যাহত থাকতে পারে।
একই সময়ে চট্টগ্রাম, বান্দরবন, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, রহমতখালী খাল ও নোয়াখালী খাল নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি বা সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এতে এসব জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাউবো আরও জানিয়েছে, লঘুচাপ এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, সিলেট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সংলগ্ন উজান (ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়) অঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগ ও সংলগ্ন উজানে ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামীকালকের পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, লঘুচাপের প্রভাবে আগামী ২৭ জুলাই (রবিবার) বিকেল ৫টা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
আজ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।