সারাদেশ

সাত সন্তান ও অসুস্থ শাশুড়ী নিয়ে মানবেতর কাটছে সুলেমার জীবন

  প্রতিনিধি 14 April 2025 , 4:26:17 প্রিন্ট সংস্করণ

আনিসুল হক সুমন: স্বামী মারা গেছেন দুই বছর আগে। এরপরই জীবনে নেমেছে সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট। এখন সাত সন্তান ও অসুস্থ শাশুড়ি নিয়ে ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস। সকালে দুমুঠো খেলেও দুপুরে মেলেনা। রাতে তাদের খাওয়াবে কি এই চিন্তায় এখানে-ওখানে দৌড়ঝাঁপ। অর্থের অভাবে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না সন্তানরা।নেত্রকোনার দুর্গাপুরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মউ গ্রামের বাসিন্দা মৃত সাদত আলীর স্ত্রী অসহায় সুলেমা খাতুন নামে এমনি একজন মায়ের বেঁচে থাকার লড়াই চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানদের পেটে ক্ষুধা, মা সুলেমার অশ্রুসিক্ত দু-নয়ন, মুখে চিন্তার ভাঁজ। দুপুরে খাওয়া হয়নি পরিবারের কারোরই। ঘরে আছে অল্প চাউল, কিন্তু তরকারি নেই কিছুই, রাতে কি খাবে এই ভেবে বসে আছে ঘরের সামনে। বড় ছেলে আইসক্রিম বিক্রিতে বের হয়েছে কিছু টাকা পেলে যদি কিছু আনতে পারে এই অপেক্ষা শুধু। সুলেমা খাতুন জানান, বেঁচে থাকতে স্বামীও ভিক্ষা করতেন। তিনিও অন্যের বাড়ি কাজ করতেন। তখনও কষ্টে দিন কেটেছে তাদের। সংসারে ছিল পাঁচ ছেলে তিন মেয়ে ও শাশুড়ি। ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামীর মৃত্যুর পর খাবার জোগাতে সুলেমাও হাত পাত্তে হচ্ছে মানুষের কাছে। হাত পেতে কয়দিন চলে কখনও মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা মিলে তা দিয়েই সন্তানদের নিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে জীবন চালাচ্ছেন তার উপর আবার স্বামীর চিকিৎসায় খরচ ঋণের টাকার বোঝা মাথর উপর। এরই মধ্যে এক মেয়েকে গত এক সপ্তাহ আগে আশপাশের মানুষের সহায়তায় ও ঋণ করে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সাত সন্তান নিয়ে বসবাস। সাথে অসুস্থ শাশুড়িও। উপার্জন উপযুক্ত বড় ছেলে কাজ পেলে কাজ করে তা নাহলে তারও হাত পাত্তে হয় মানুষের কাছে। এভাবেই দুঃখে কষ্টে বেঁচে আছেন। সুলেমা আরও বলেন, মাঝে মধ্যে আশেপাশের বাড়িতে কাজ পেলে করি যা পাই তাই সন্তানদের লইয়া খাই। কিন্তু সব সময় কাজ থাকে না। দুই-তিন আগে পাশের বাড়ির মাসুদের মা কিছু চাউল দিছিলো ওগুলো সন্তানদের খাওয়াচ্ছি। বড় ছেলে আইসক্রিম বিক্রি করতে বের হয়েছে যদি কয়ডা টাকা পায়, কিছু যদি আনে, নইলে তো এভাবেই না খেয়েই থাকতে হবে। প্রতিবেশী হাসিনা বেগম বলেন, সুলেমা সন্তানদের নিয়ে এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে যতুটুুকু পারি সাহায্য করি কিন্তু সব সময় তো আমরাও পারি না তখন শুনি তারা না খেয়ে আছে। ছোট ছোট পোলাপান গুলোরে মাদ্রাসায় ভর্তি করাইতো সবার কাছে সাহায্য চাইতেছে, সাহায্য পাইলে ভর্তি করাতে পারবো নয়তো পারতো না। ঘরেও খাওন নাই এমনেই কষ্টে বেঁচে আছে এরা। কেউ যদি তার জন্য এগিয়ে আসতো তাহলে ভালো হতো। মোঃ আকবর আলী বলেন, সুলেমার জামাইও অসুস্থ আছিলো ভিক্ষা করতো তখনও কষ্ট করছে এখনও কষ্টই করতাছে পোলাপান গুলোরে নিয়ে। খাইতে পারলে খায় না পাইলে না খাইয়া থাকে। খুবই কষ্ট করতেছে তারা।

আব্দুল মজিদ নামের আরেক জন বলেন, এরা এত পুলাফাইন নিয়া যা কষ্টে আছে তা বলার মতনা, কেউ যদি এরার পাশে দাড়াইতো তাইলে আল্লাহ হেরে অনেক সয়াব দিলো।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ