মনিরামপুর যশোর প্রতিনিধি।।
মনিরামপুরে স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে ২০ বছর পর শিক্ষক নিয়োগ এবং এমপিওভুক্ত
যশোরের মনিরামপুরে এক বিদ্যালয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী, দুই প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুই সভাপতি সহ নিয়োগ বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে মোঃ বদরুজ্জামান নামে এক শিক্ষক’কে নিয়োগ এবং এমপিওভুক্তির আভিযোগ উঠেছে।
২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) নিয়োগ দেখানো হয় বদরুজ্জামানকে। কিন্তু নিয়োগের ২০ বছরেও তিনি একদিনও স্কুলে আসেননি। প্রধান শিক্ষক তাপন কুমার পাইন ছাড়া শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা তাকে চেনেনা। জাল-জালিয়াতের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে স্কুল এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৪ সালে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোঃ ইনছার আলী। তারা দায়িত্বে থাকা কালিন বদরুজ্জামান নামে কোন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত হননি। অথচ ২০ বছর পরে এসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনকে নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। কথিত এ শিক্ষককে বিদ্যালয়ে ওঠানো নিয়ে বিদ্যালয় এলাকায় জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। এমনকি ক্ষুদ্ধ জনতা বতর্মান প্রধান শিক্ষক তাপন কুমার পাইনকে বিদ্যালয়ে দু’দফা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
স্থানীয়দের দাবী, বদরুজ্জামানকে নিয়োগ দেখাতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ ইনছার আলী ও সাবেক দুজন সভাপতি স্বাক্ষর জাল করার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ দু’সভাপতির মধ্যে একজন রয়েছেন, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। অপরজন হলেন, বিজয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ঝন্টু পাটোয়ারী। এছাড়া নিয়োগ বোর্ডের অপর প্রধান শিক্ষক সদস্য করা হয়েছে উপজেলার সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মৃত. প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ এবং প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান’কে। এলাকায় চাউর উঠেছে নিয়োগ কর্তা এবং ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে।
কাগজপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, মনিরামপুর উপজেলার গোপিকান্তপুর গ্রামের মৃত. কেরামত আলীর ছেলে মোঃ বদরুজ্জামান বাবুকে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর ‘খ’ শাখায় সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেখানো হয়। যোগদান দেখানো হয় ২০০৫ সালে ৫ জানুয়ারী। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি ৪ দিন আগেই এ যোগদানের অনুমোদন দিয়েছেন। অবশ্যই এসব ব্যাপারে কিছুই জানেনা তৎকালি প্রধান শিক্ষক ইনছার আলী। তিনি দাবী করেন, ৩৭ বছর শিক্ষকতার কর্মজীবনে বদরুজ্জামান বা বাবু নামে কাউকে বিজয়রামপুর স্কুলে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি আমার করা স্বাক্ষর নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটা আদেও সত্য নয়। তবে, যতটুকু শুনেছি বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ও কতিপয় ব্যক্তিরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে একজন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্তি করানো হয়েছে। বর্তমানে তাকে বিদ্যালয়ে উঠানোর চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, কথিত এই শিক্ষক বদরুজ্জামানকে কখনই স্কুলে আসতে দেখেনি এবং নিয়োগটা সম্পূর্ণ জাল-জালিয়াতি। অথচ ২০২৪ সালে ১০ জুলাই এক রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে অষ্টম শ্রেণীর ‘খ’ শাখা থেকে মূল প্যাটানে পদায়ন করে একই রেজুলেশনের তার এমপিওভূক্তির সুপারিশ পাঠানো হয়। অথচ বেতন-বিলের সুপারিশকারী তৎকালীন সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
সাবেক সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারী জানান, সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন মোঃ বদরুজ্জামান নামে কোন শিক্ষক স্কুলে ছিলনা। তার রেজুলেশনে আমার স্বাক্ষর কিভাবে এলো এটা আমার জানার বাইরে।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজসে ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বদরুজ্জামানকে শিক্ষক হিসেবে বিদালয়ের আদিষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনের ০১৭১৩৭০৫৬০৬ নম্বর মুঠো ফোনে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম বজলুর রশিদ জানান, নিয়োগটি অনেক আগের যে কারনে যাচাই বাছাই করার কোন সুযোগ হয়নি। পেপার পত্রিকায় আসলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন জানান, উপজেলা থেকে যেভাবে আসছে সেইভাবে ফাইটি ডিজিতে ফরোয়াডিং করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখন খুব গুরুত্বের সহিত খতিয়ে দেখা হবে।