প্রতিনিধি 9 May 2025 , 7:22:34 প্রিন্ট সংস্করণ
বিশেষ প্রতিনিধি, মোঃ মিন্টু:
সাভারের তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ কার্যালয় থেকে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে গেছে ১৪৯টি গ্যাস মিটার। সিসিটিভিতে একজন ব্যক্তিকে দেখা গেলেও, প্রশ্ন উঠেছে—উঁচু প্রাচীর, কাঁটাতার ও নিরাপত্তার মাঝেও কীভাবে চুরি সম্ভব? এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি, বরং অফিসে বিরাজ করছে নীরবতা ও দায় এড়ানোর প্রবণতা।
গত বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাভার তিতাস গ্যাস অফিস কার্যত ফাঁকা। অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপস্থিত, এবং উপস্থিতরাও স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে অপারগ। কেউ বলেন “শুনেছি”, কেউ বলেন “এই দপ্তর আমার নয়”।
তিতাস গ্যাস জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী তৌফিক এলাহী সবুজ বলেন, “আপনারা যতটুকু শুনেছেন, আমিও ততটুকুই শুনেছি। এই দপ্তর আমার আওতাধীন নয়।” তবে তিনি বিষয়টি কোন দপ্তরের আওতায় পড়ে, সেটিও নিশ্চিত করতে পারেননি।
মিটার পরীক্ষানিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী রতন চন্দ্র প্রধান জানান, “চুরি যাওয়া মিটারগুলো ‘রোটারি মিটার’, যা সাধারণত শিল্পকারখানা, বহুতল ভবন ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত হয়।” কিন্তু বিস্তারিত জানাতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
নিরাপত্তা প্রধান হাবিল উদ্দিন বলেন, “দুই দিন আগে শুনেছি চুরির কথা।” কিন্তু যেখানে প্রাচীর ও কাঁটাতারের কড়া নিরাপত্তা, সেখানে এমন চুরি কীভাবে সম্ভব, এই প্রশ্নে তিনি নিরুত্তর।
ব্যবস্থাপক (আরএমএস ইঞ্জিনিয়ারিং, টেস্টিং অ্যান্ড সিলিং শাখা) প্রকৌশলী আবদুল্লাহ হাসান আল মামুন জানান, “মিটারগুলো অকেজো অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল এবং ডাম্পিংয়ের জন্য ঢাকার ডেমরায় পাঠানোর কথা ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে একজন ব্যক্তিকে দেখা গেছে, তবে গাড়ি ছাড়া একজন কীভাবে এত মিটার নিয়ে যায়, সেটা তদন্তাধীন। আমাদের কোনো কর্মচারী জড়িত নয় বলে আমরা মনে করি।”
অবাক করার বিষয়, এতো বড় চুরির ঘটনায় তিতাস কর্তৃপক্ষ এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। মামলা বা আইনগত পদক্ষেপের বিষয়টি এখনও ‘পর্যবেক্ষণাধীন’।
গাজীপুর মিটার সেকশন ডিজিএম বোরহান উদ্দিন জানান, “তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। গ্যাস সংযোগ ৮-১০ বার বিচ্ছিন্ন হলে সরকারের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।” কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
সূত্র মতে, উক্ত তিতাস অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ও নীরব চোরাগলি। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।