অন্যান্য

সুনামগঞ্জ-১: বিএনপির বহুমুখী প্রতিযোগিতা, একক প্রার্থী জামায়াত ও জমিয়তের

  প্রতিনিধি 17 July 2025 , 9:43:09 প্রিন্ট সংস্করণ

তোফাজ্জল ইসলাম – সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সুনামগঞ্জ-১ আসনে জমে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। এই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় রয়েছেন, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে নেমেছে। ফলে ত্রিমুখী রাজনীতির সম্ভাবনা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তৈরি হয়েছে উত্তাপ ও উৎসাহ।

চারটি উপজেলা—তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ নিয়ে গঠিত এই হাওরবেষ্টিত আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৫ জন; যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯, নারী ২ লাখ ২৭ হাজার ৭০১ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫ জন।

বিএনপিতে প্রার্থী বেশি, প্রত্যাশাও অনেক

এই আসনে ধানের শীষ প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন অন্তত ৮ জন বিএনপি নেতা। তাঁদের মধ্যে কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান, কেউ কেন্দ্রীয় নেতা আবার কেউ ইউরোপ-আমেরিকার প্রবাসী সংগঠক। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন
(সাধারণ সম্পাদক, যুক্তরাজ্য বিএনপি আইনজীবী ফোরাম; পুত্র, প্রয়াত এমপি এম.এ. আফসার)বলেন,
জননেতা প্রয়াত এম.এ.আফসার সাহেবের সন্তান হিসেবে আমি মানুষের কাছে রাজনীতিকে পরিচ্ছন্নভাবে উপস্থাপন করছি। আমি চাই দল তার সঠিক নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করুক।

আনিসুল হক
(সাবেক চেয়ারম্যান, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ; কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক; সদস্য, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি)বলেন,

দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে দলের জন্য কাজ করছি। আমার বিশ্বাস, কর্মীসমর্থকের ভালোবাসা ও আস্থাই আমার শক্তি। দল নিশ্চয়ই তা বিবেচনা করবে।

আব্দুল মোতালেব খান
(সাবেক চেয়ারম্যান, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ; সদস্য, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি)বলেন,
এই এলাকায় বিএনপির সংগঠনকে আমি ভিত্তিমূল থেকে গড়ে তুলেছি। মনোনয়ন পেলে আসনটি পুনরুদ্ধারে আমি আশাবাদী।

মাহবুবুর রহমান (সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদল)বলেন,
আমি মাঠে ছিলাম, আছি। তরুণদের সুযোগ দিলে আমরাই এই প্রজন্মকে রাজনীতির প্রতি আস্থাশীল করতে পারব। দল সিদ্ধান্ত নিক বিবেচনা করে—এটাই আমার প্রত্যাশা।

সালমা নজির (সদস্য, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি; নারী উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী; স্ত্রী, সাবেক এমপি নজির হোসেন),
নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বিএনপির উচিত এবার একজন যোগ্য নারীকে মনোনয়ন দেওয়া। আমি সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।

কামরুজ্জামান কামরুল
(সাবেক চেয়ারম্যান, তাহিরপুর উপজেলা; সদস্য, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি)বলেন,
আমার রাজনীতির মূল লক্ষ্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা। জনগণের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হৃদয়ের। মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারব।

নিজাম উদ্দিন
(সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল) বলেন,
বিদেশে দলের হয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। এবার দেশে ফিরে জনগণের পাশে থাকতে চাই। আমার অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগ দলকে শক্তিশালী করবে।

মো. ছাদেকুল ইসলাম
(সিনিয়র নেতা, জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপি)বলেন,
দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। মনোনয়ন পেলে সবাইকে নিয়ে কাজ করে বিজয়ী হব।

তবে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্থানীয়ভাবে বিভক্তি, মতপার্থক্য ও ভোট বিভাজনের শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

একক প্রার্থী, ঐক্যবদ্ধ কৌশলে জামায়াত ও জমিয়ত, বিএনপির ভিন্ন চিত্রে জামায়াতে ইসলামি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে সংগঠিতভাবে মাঠে নেমেছে।

মাওলানা তোফাজ্জল আহমদ খান (জেলা আমির, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী; প্রার্থী, সুনামগঞ্জ-১ আসন) বলেন,
আমরা দীর্ঘদিন থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগঠন গড়ে তুলেছি। জনগণের ভালোবাসা আমাদের শক্তি। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি তৃণমূলকে নিয়ে।

মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ (মুফতি ও কেন্দ্রীয় নেতা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ; প্রার্থী, সুনামগঞ্জ-১ আসন) বলেন,
ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জনকল্যাণই আমাদের রাজনীতির মুল ভিত্তি। আমরা বিকল্প নেতৃত্ব দিতে এসেছি, যা জনগণ ইতোমধ্যে উপলব্ধি করছে।

এই দুই দলের প্রার্থীরা রমজান মাস থেকে ২৩টি ইউনিয়নে পথসভা, কর্মী সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। তৃণমূলে তাদের ঐক্যবদ্ধ কৌশল ভোটারদের মাঝে ভিন্ন বার্তা দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারেক আল মঈন বলেন—
একটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলে মূল দলের ভোটে বিভাজন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেখানে জামায়াত ও জমিয়তের মতো বিএনপিরও সমন্বিতভাবে প্রার্থী নির্ধারণ করা দরকার। না হলে ফায়দা তুলবে অন্য কেউ।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনী হিসাব এখনো চূড়ান্ত নয়। বিএনপির বহুমুখী প্রতিযোগিতা বনাম জামায়াত-জমিয়তের একক কৌশল—এই নির্বাচন হবে উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাময়। এখন দেখার বিষয়, কে পান ধানের শীষ, আর কে থাকেন একক জয়ের পথচিত্রে?

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ