প্রতিনিধি 12 August 2025 , 7:47:42 প্রিন্ট সংস্করণ
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সুন্দরবনের চর দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট। চরের গাছ কেটে সাবাড়ের পর পায়ে চলাচলের রাস্তাসহ সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের রাতযাপনের উপযোগী আবাসস্থল। এছাড়া চারপাশে বাঁধ তৈরি করে চরের মধ্যে ‘লেক সদৃশ’ জলাধার তৈরির পাশাপাশি রাস্তার শেষপ্রান্তে নির্মিত হচ্ছে ‘জেটি’ বা পল্টুন। সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা যেখান থেকে একই প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট নৌযানে চড়ে ঘুরে বেড়াবে সুন্দরবন।
সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এমন রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট নির্মিত হচ্ছে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মুন্সিগঞ্জ এলাকায়। বনবিভাগের মুন্সিগঞ্জ অফিস হতে মাত্র ৫০০ মিটার দক্ষিণে মালঞ্চ নদীর তীরে মৌখালী এলাকায় প্রায় আট মাস ধরে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ চললেও বনবিভাগ কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ নাকি কিছু জানে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খুলনার মাহাবুব আলম প্রায় ছয় মাস ধরে মালঞ্চ নদীর তীরে এএন্ডএন ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরস নামের রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এর আগে সেখানকার বাঁধ প্রশস্থ এবং উঁচু করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। পরবর্তীতে বহিরাগত এক ব্যক্তি এসে প্রভাবশালী ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ী পরিচয়ে ডাম্পিংকৃত উক্ত বাঁধের ওপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন গাছের ফুল ও ফল জমে চরে কৃত্রিম বনভুমি সৃষ্টি হয়। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক বনায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট এসব বনভূমি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নেয়। অথচ চরে জম্মানো গাছ কেটে সাবাড়ের পাশাপাশি শুধু মাত্র ব্যবসা করতেই সেখানে রিসোর্ট সেন্টার ও ট্যুরিস্ট পয়েন্ট গড়ে তোলা হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ গ্রামের কালিপদ বিশ্বাস জানান, সেখানে ট্যুরিস্ট পয়েন্ট হলে বহিরাগতদের আনাগোনা মারাত্বকভাবে বেড়ে যাবে। ভাল মানুষের সঙ্গে বদঅভ্যাসে জড়িতদেরও আনাগোনাও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। তাতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া চরের গাছ-গাছালি কেটে সাবাড়ের ফলে সেসব এলাকার বাঁধ অতিশয় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।
স্থানীয় গ্রামবাসী আব্দুল্লাহ ও রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের দাবি, সুন্দরবনে আবারও জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দস্যুরা সাধারণত প্রকাশ্যে নিচে নামা কিংবা উপরে উঠে আসতে পারে না। লোকালয়ের বাইরে এমন অজ পাড়াগায়ের মধ্যে রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট হলে বহিরাগতদের নিয়ে তারাও নিজেরাও শঙ্কার মধ্যে পরবেন।
এদিকে পরিবেশ নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত শাহিন বিল্লাহ জানান, যত্রতত্র রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট হিতে বিপরীত হতে পারে। এমনিতেই অসচেতন পর্যটকদের পতিত প্লাস্টিক ও পলিথিনে সুন্দরবন মারাত্মক ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। তার উপর এভাবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া যে কেউ মন চাইলেই রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট করলে তার ফল খুবই খারাপ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএন্ডএন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক মাহাবুব আলম জানান, তিনি ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছেন। কাগজপত্রের প্রমাণপত্র দেখতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদককে বকা নিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশনাল প্রকৌশলী ইমরান সরদার জানান, বিষয়টি জানতে পেরে প্রায় ছয় মাস আগে উক্ত স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়। পাউবোর জায়গায় কারও কোনো রিসোর্ট সেন্টার বা ট্যুরিস্ট পয়েন্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দ্রুতই এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. রনী খাতুন জানান, আপনারা সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার লিখিত অনুমতি দেখতে বলেন। তারা কারও থেকে কোনো অনুমতি না নিয়েই হয়ত এমনটা করছে। দ্রুতই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।