ভবদহ অঞ্চলে 'চাহিদার তুলনায় ত্রাণ অপর্যাপ্ত, মানবেতরে পানিবন্দিরা
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের অভয়নগর উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি ঢুকে পড়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও জলাবদ্ধ গ্রামে নতুন করে পানি বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলার চলিশিয়া, পায়রা, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের ২৫ গ্রাম ছাড়াও নতুন করে আরো ৫ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ।
চাহিদার তুলনায় জলাবদ্ধ এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ কম হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে শত শত পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান জানান, চলিশিয়া, পায়রা, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের ৩ হাজার ৩৫০ পরিবারের প্রায় ১৩ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলোতে এখন হাঁটুপানি। ইতোমধ্যে ১৫ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ ধাপে প্রায় ১৫০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে শুকনা খাবার ও ১০ টন চালসহ নগদ এক লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ২য় ধাপে জলাবদ্ধ এলাকার ৪ ইউনিয়ন পরিষদে জেলা প্রশাসক কর্তৃক জিআর (ত্রাণকার্য, চাল ও নগদ অর্থ) বরাদ্দের ১৫ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। ৩য় ধাপে পরিবার প্রতি ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ঢাল, ১ লিটার তেল, আধাকেজি লবণ, এক প্যাকেট মশার কয়েল ও ২টি মোমবাতি বিতরণ চলমান রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ত্রাণ সরবরাহ কম আসছে।
সরেজমিনে পানিবন্দি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা পরিবারগুলো সপ্তাহ অন্তর ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা পরিবারগুলো গত ১৬ দিনেও কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত পরিমাণ দেয়া হচ্ছে না। জলাবদ্ধ এলাকায় বাড়িঘরে যাতায়াত করতে নৌকা ও বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এ সময় পায়রা ইউনিয়নের দীঘলিয়া গ্রামের হুমায়ন কবীর বলেন, তাদের ইউনিয়নের ভবদহ ও দীঘলিয়া গ্রাম অবহেলিত। কারণ এই দুই গ্রামের পানিবন্দি ৩২২ পরিবারের মধ্যে মাত্র ১৩৫ পরিবার সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। অন্য পরিবারগুলো একই ঘরের মধ্যে গৃহপালিত পশু সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানিবন্দি সকল পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের আহবান জানান তিনি।
সুন্দলী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মুড়ি বিক্রেতা প্রভাত রায় বলেন, পরিবারের সাতজন সদস্য নিয়ে খেয়ে না খেয়ে রয়েছি। এখনো মেলেনি কোনো ত্রাণ সহায়তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন পানিবন্দি বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ জন গৃহবধূ। এসময় তারা বলেন, অনেক দিন পার হলেও তাদের কাছে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে। কয়েকজন গৃহবধূ বলেন, বেশিভাগ গ্রামে মুখ চেনা পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রর বাইরে অবস্থান করা পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে না। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সহায়তা দেয়ায় সম্ভব না। তেমন লোকবলও নেই। তবে বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো হচ্ছে। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে চাহিদা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’