অন্যান্য

হঠাৎ থেমে যায় চলন্ত ট্রেন, ঘোষণা আসে ‘যাত্রীদের নামার দরকার নেই’

  প্রতিনিধি 2 September 2025 , 5:43:09 প্রিন্ট সংস্করণ

রাতের বেলা। স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীদের অনেকেই তখন ঘুমে। এর মধ্যে ঝাঁকুনি দিয়ে হঠাৎ ট্রেন থেমে যায়। প্রায় সবাই হতচকিত হয়ে পড়েন। কয়েকজন আতঙ্কিত হয়ে যান। নির্ধারিত স্টেশনের আগেই কেন ট্রেন থেমে গেল, তা জানতে তৎপর হয়ে পড়েন অনেকেই। এর মধ্যে থেমে যাওয়া ট্রেন থেকে নামতে শুরু করেন যাত্রীরা। তখন ট্রেনের সাউন্ড সিস্টেমে ঘোষণা আসে ‘ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামার দরকার নেই।’

গতকাল সোমবার রাতে চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিনের বাফার হুক ভেঙে বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পর্যটক এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. মাহবুব আলম পরিস্থিতি তুলে ধরেন এভাবে। তিনি অফিসের কাজ শেষে রাতে কক্সবাজার থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস করে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তিনি।বিরতিহীন ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসার পর সরাসরি চট্টগ্রাম এসে থামার কথা; কিন্তু এর আগেই পটিয়ায় হঠাৎ থেমে যায়। চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিনের বাফার হুক ভেঙে যায়। এতে ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যাত্রীবাহী ১৮টি বগি।

গতকাল রাত ১০টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার গিরিশচন্দ্র বাজার এলাকায় থেমে যায় প্রায় ৯০০ যাত্রীবাহী ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস। আবার যে জায়গায় ট্রেন থেমেছিল, তা পটিয়া স্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। স্টেশন থেকে দূরে হওয়ায় এবং চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে যাত্রীদের ধারণা না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই অস্বস্তি আর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা ট্রেনে ছিলেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন হঠাৎ থেমে যাওয়ার কারণ জানতে ট্রেন থেকে অনেকে নামার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ ঠিকই নেমে যান। এ সময় রেলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় ট্রেন থেকে না নামতে। তবে সে কথা অনেকেই শোনেননি।

বাফার হুক ভেঙে যাওয়া ইঞ্জিন যাত্রীবাহী বগিগুলো রেখে চট্টগ্রাম চলে যায়। পরে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন পাঠানো হয়। তা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আর ট্রেন ছাড়তে সময় লাগে আরও ২০ মিনিটের মতো। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ট্রেন ছাড়ে রাত ১২টায়।

ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ছেড়ে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে তাঁদের বগিতে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি বলে জানান মো.মাহবুব আলম। সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তাঁদের ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। যদিও শেষ পর্যন্ত পৌঁছায় রাত দেড়টায়। তিনি বলেন,শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি ছিল। গরমের যন্ত্রণা ছিল না। আর কয়েকজন তরুণ গান-বাজনা শুরু করে দেন। তাতে সময় মন্দ কাটেনি। তবে পাশের কয়েকটি বগিতে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনেছেন।

চট্টগ্রামের পটিয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. রাশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে ট্রেন থেমে যায়। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য শুরু থেকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা তৎপর ছিলেন। ইঞ্জিনের বাফার হুক ভেঙে যাওয়া এবং উদ্ধারকারী ট্রেন পাঠানোর জন্য দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তাঁরা। চট্টগ্রাম থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন এসে পৌঁছায়। দুই ঘণ্টার কম সময় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে।

মাহবুব আলমদের বগিতে তেমন কোনো ঝামেলা না হলেও অন্য কয়েকটি বগিতে হইহুল্লোড় হয়েছে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান। পর্যটক এক্সপ্রেসের এসব বগিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন। তাঁদের অনেকের গন্তব্য ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পর্যটক এক্সপ্রেসের বগি রেখে ইঞ্জিন চলে যাওয়ার কারণে তাঁরা তূর্ণা এক্সপ্রেস ধরতে পারবেন না আশঙ্কা করে ট্রেনে চিৎকার শুরু করেন। পরে অবশ্য রেলওয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা ট্রেনের যাত্রার সময় পিছিয়ে দেয়।

পর্যটক এক্সপ্রেসে থাকা আবদুস সামাদ নামের এক যাত্রী বলেন, কক্সবাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন নেই। তাই প্রথমে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য পর্যটক এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে তূর্ণা এক্সপ্রেস করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবেন। কিন্তু পর্যটক এক্সপ্রেস এমন জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে, সেখান থেকে গাড়ি পাওয়া এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তাই যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তবে রেলওয়ের পক্ষ থেকে তূর্ণা এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে যাত্রীরা শান্ত হন।

এদিকে পর্যটক এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কারণে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। রাত সাড়ে ১১টায় এই ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায়নি। পর্যটক এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছানোর পর দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় ছাড়ে। এ সময় তূর্ণা এক্সপ্রেসের প্রায় ৮০০ যাত্রীকে বসে থাকতে হয়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবু জাফর মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটক এক্সপ্রেসে তূর্ণা এক্সপ্রেসের প্রায় ১০০ যাত্রী ছিলেন। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্টেশনে নামার কথা। তাঁদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে রেল ভবনের নির্দেশনায় তূর্ণা এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় পিছিয়ে দিতে হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা পর ঢাকার উদ্দেশে তূর্ণা এক্সপ্রেস ছাড়ে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ