হালুয়াঘাটে গত বৃহস্পতিবার কুমুরিয়া নড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রোমেনা আফরোজাকে হেনস্ত করার উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি অফিস কক্ষ রেখে ফেসবুকে লাইভ করার প্রতিবাদ আজ রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সহ সকল ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার খুররম তালুকদার আইডি থেকে লাইভ করা হয় সেখানে এক মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখানো হয় যে, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবিটি আলমারি সামনে এবং চার-পাঁচজন লোক অফিস কক্ষে প্রবেশ করে এবং শিক্ষিকাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে আসছে।
এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রোমেনা আফরোজের সাথে কথা বললে উনি জানান যে, আমি ক্লাসে ছিলাম ক্লাস থেকে এসে দেখি কিছু লোক আমার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুজন ছবি তুলছে তাদের মধ্যে একজন খুররম, অন্যজন জুয়েল খান। জুয়েল খান আমার সামনে দরজায় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি টানিয়ে ছবি তুলছিল, তখন আমি তাকে বললাম ছবিগুলো ছিল স্টোর রুমে সেখান থেকে ওরা ডিসপ্লে করে নাটক সাজিয়ে ছবি তুলছে এতে আমার আপত্তি আছে। ছবিগুলো ছিল স্টোর রুমের নিচে।
এ বিষয়ে প্রাক্তন ছাত্র নাঈম বলেন, “শেখ হাসিনার যে, ছবিটা যে,আলমারি সামনে রাখা সেই আলমারিটা প্রতিনিয়তই আমাদের ম্যাডামের দিনে ছয় সাতবার খুলতে হয়। বিভিন্ন কাগজপত্র বের করার জন্য। এটা এই জায়গায় কেন রাখবে ।এটা যে এই জায়গায় ছিল না ,সেটারও প্রুভ আছে আমাদের কাছে।
আমরা প্রতিনিয়তই ম্যাডামের সাথে দেখা করতে যাই অফিসে ।যেহেতু আমাদের বাড়ি স্কুলের পাশেই। এটা আমাদের শিক্ষিকাকে ফাঁসানোর জন্যই তারা চক্রান্ত করে এই কাজটা করেছে।
এসময় অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হালুয়াঘাট এর সমন্বয়ক মামুন মিয়া বলেন, ২০২৪ সালের বন্যার সময় আমরা অত্র স্কুলের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিকট থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করেছি, সে সময় ম্যাডামের অফিস রুমে ত্রান প্যাকেজিং করা হয় এবং অফিস রুমে আমাদের গ্রুপ ফটোও রয়েছে আমার কাছে, সেখানে শেখ মুজিব কিংবা শেখ মুজিবের কোন ছবি আমরা দেখতে পাই নাই। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মিথ্যা ঘটনার প্রতিবাদে আজকে আমাদের মানববন্ধন।
অত্র বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী বিজয় সরকার কাব্য বলেন, আমরা প্রতিদিনই ম্যাডামের কক্ষের সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করি ৫আগষ্টর এর পর ম্যাডামের রুমে কোন ছবি ছিল না, ম্যাডাম ক্লাসে থাকায় কিছু লোক এস এগুলো বের করে ম্যাডাম কিছু বুঝ উঠার আগেই তারা লাইভ করে ম্যাডামকে অপমান করতে থাকে। বিষয়টি খুবই ন্যাক্কারজনক।
কুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাঝহারুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ত্রান দেওয়ার সময় আমি নিজে ও আরও অনেক লোকজন প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে এসেছিলাম তখন আমরা কোন ছবি দেখতে পাই নাই।
অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবি রানী সরকার বলেন, ৫ই আগষ্টের পর আমরা ছবিগুলো নামিয়ে ষ্টোররুমে রেখে দেই। প্রধান শিক্ষিকা ক্লাসে থাকার সময় কিছু লোক এসে ষ্টোররুম থেকে ছবিগুলো নিয়ে সাজিয়ে ভিডিও করেছে।
অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বিউটি রানী কর বলেন, ৫ই আগষ্টের পর আমরা ছবিগুলো নামিয়ে ফেলছি, কে বা কারা ছবিগুলো ম্যাডামের রুমের সামনে এনে ছবি তুলছে আমি ক্লাসে থাকায় দেখতে পারি নাই। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটা করা উচিত হয় নাই।
অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ উসমান আলী বলেন ৫ই আগষ্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পরই আমরা ছবিগুলো নামিয়ে ষ্টোররুমে রেখেছিলাম। কিছু লোক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছবিগুলো এন সাজিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন করেছে। আমরা চাই ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি না ঘটুক।
অত্র বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী মোঃ আজিম উদ্দিন বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে এই স্কুলে চাকুরী করি। আমি কোন মিথ্যা বলব না, মুজিবের ও শেখ হাসিনার ছবি উল্টাইয়া পিছনে রাখা ছিল, ম্যাডামের রুমের ভিতরেই গোডাউন। ছবি গোডাউনে ছিল। তারা সংগ্রহ করে সাজাইয়া ছবি তুলছে ও ম্যাডামকে থ্রেট দিয়েছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত কয়েকজনের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তারা ফোন রিসিভ করে নি।
এমন পরিস্থিতিতে যেন, আর কোনো শিক্ষক ও শিক্ষিকা পরতে না হয় এমনটাই আশা শিক্ষার্থীদের।


