প্রতিনিধি 19 August 2025 , 7:28:28 প্রিন্ট সংস্করণ
ফয়সাল হায়দার, স্টাফ রিপোর্টার
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা যেন দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। কাগজে-কলমে এটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র ৩১ শয্যা। অথচ সোমবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৮৫ জন রোগী। ফলে বারান্দা, সিঁড়ি, এমনকি বাথরুমের সামনে পর্যন্ত রোগীদের ঠাঁই নিতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স ও চিকিৎসকরা সীমাহীন চাপের মধ্যে কাজ করছেন। এক নার্স ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রোগী সামলাতে সামলাতে আমরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।”
১১ বছরেও আসেনি জনবল ও সরঞ্জাম
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১১ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেই অনুযায়ী জনবল, সরঞ্জাম বা বাজেট এখনো মেলেনি। বাড়তি ১৯ শয্যার জন্য থাকার কথা ছিল ১৬ জন চিকিৎসক, ১২ জন অফিস স্টাফ, ৪ জন পরিচ্ছন্নকর্মী, ২০টি বেড ও ৫০ রোগীর খাবার বরাদ্দ। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই মেলেনি।
বর্তমানে হাসপাতালে আছেন মাত্র ৬ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে ৩ জন ডেপুটেশনে, একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ৩ জন কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। পরিচ্ছন্নকর্মী আছেন মাত্র একজন, যেখানে প্রয়োজন ছয়জন।
অপারেশন বন্ধ, প্রসূতিদের দুর্ভোগ
হাসপাতালে সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিলে প্রসূতি মায়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যত্র। এতে গরিব পরিবারগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।
প্রসূতি সেবা নিতে আসা সৈয়েদা মুনিয়া রহমান জানান, “সিজারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য জটিলতাতেই অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। গরিবদের জন্য এটি চরম ভোগান্তির।”
অন্যদিকে, চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী বলেন, “বেড নেই, তাই মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।” খাবারের সংকটও মারাত্মক। অনেকেই সেবা না পেয়ে অন্য হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বয়সে প্রবীণ রোগী মোখলেছুর রহমান মুকুল বলেন, “আমি অসুস্থ, তবু হাসপাতালে যাচ্ছি না শুধুমাত্র মেঝেতে শুতে হবে বলে। বেডের অভাবে বাসায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছি।”
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অসহায়ত্ব
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আবু আহসান বলেন, “চিকিৎসক নেই, বেড নেই, পরিচ্ছন্নকর্মী নেই, খাবার নেই। এ অবস্থায় মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, চিকিৎসক সংকট নিরসন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না এলে জনগণকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।
তিন লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসা
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও ১১ বছরেও প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম না আসায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।