প্রতিনিধি 3 October 2024 , 1:20:54 প্রিন্ট সংস্করণ
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মেহেদী হাসান ফিরোজ ও তার বন্ধু বারাকপুর ইউনিয়ন যুবদল কর্মী মো. আফজাল হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ১৪ বছর। নিখোঁজ ফিরোজ দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামের বাসিন্দা এবং আফজাল লাখোহাটি গ্রামের বাসিন্দা।
‘গুমের’ শিকার এই ২ জনকে দীর্ঘদিনেও খুঁজে পায়নি তাদের পরিবার। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন তাদেরকে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান মেলেনি। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে গুম সংক্রান্ত কমিশনের কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপি। ফিরোজের ভাই দিঘলিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গাজী মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমার বড় ভাই ফিরোজ খুলনা নগরীর মুসলমানপাড়া এলাকার বাসা থেকে মোটরসাইকেলে করে তার বন্ধু আফজালকে সঙ্গে নিয়ে বের হন। তাদের বাগেরহাট যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাতে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওযা যায়। অনেক রাত পর্যন্ত সন্ধান না পেয়ে আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করি।
এরপর আমরা র্যাব-৬ খুলনা কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। তখন তারা বর্ণনা শুনে বলেন, এই রকম দুইজন গ্রেপ্তারকৃত লোক আমাদের হেফাজতে আছে। আমি একটু পর আপনাকে জানাচ্ছি, এই বলে তিনি অফিসের ভেতরে চলে যান। আমরা গেটের বাইরে অপেক্ষায় থাকি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর এসে তিনি বলেন, ওনারা আমাদের হেফাজতে নেই। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরদিন আমি খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। আমরা থানা, ডিবি অফিস, র্যাব অফিস এবং বিভিন্ন হাসপাতালে আমাদের সাধ্যমতো আমার ভাইকে খুঁজেছি, কিন্তু এখনও তার কোনো সন্ধান পাইনি।
গাজী মো. মনিরুল ইসলাম আরও জানান, আমরা ৫ ভাই ও ৩ বোন। পারিবারিকভাবে আমরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সকল আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে চোখে পড়ার মতো। যার কারণে আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে। তিনি জানান, আমার বাবা গাজী মো. সিরাজুল ইসলাম সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। মেঝো ভাই গাজী এনামুল হাসান মাসুম খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। তিনি স্টার জুট মিল সিবিএ’র পরপর ৩ বার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এবং তার নামে ১০টি রাজনৈতিক মামলা আছে। আমি দিঘলিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, আমার নামে ১২ টি রাজনৈতিক মামলা আছে। আরেক ভাই গাজী রেজাউল ইসলাম বাবু যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার নামে ৮টি রাজনৈতিক মামলা আছে এবং একাধিক মিথ্যা মামলায় ২ বছর কারাগারে রয়েছে। ছোট ভাই গাজী রবিউল ইসলাম সবুজ সেনহাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের ১নং সদস্য এবং তার নামে ৫টি রাজনৈতিক মামলা আছে।
ফিরোজের ভাই গাজী এনামুল হাসান মাসুম জানান, আমার ভাইয়ের শোকে ২০২৩ সালের ৪ জানুযারি আমার মা মারা যায়।
আমার অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা, আমরা ৪ ভাই ও ৩ বোন ১৪ বছর ধরে আমার ভাইকে খুঁজছি। তিনি বলেন, সরকার পতনের পর গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই উদ্ধার হয়েছে। সে কারণে আমরা আশান্বিত হয়ে আমার নিখোঁজ ভাই ও তার বন্ধুকে আবারও খুঁজে বেড়াচ্ছি।
এদিকে দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. সাইফুর রহমান মিন্টু গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২ জন গুম থাকার বিষয়টি অবহিত করে অন্তর্র্বতী সরকারের গঠিত গুম সংক্রান্ত কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন। একই দিন ওই ২ জনের পরিবারের পক্ষ থেকে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এটা অনেক দিন আগের ঘটনা। তখন আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে।