অন্যান্য

১৬ বছরের দুর্ভোগ লাঘব, শিক্ষার্থীরা পেল নতুন সেতু

  প্রতিনিধি 29 October 2024 , 8:17:50 প্রিন্ট সংস্করণ

 

নদীতে পানি বাড়লেই ডুবে যেত ভাঙাচোরা বাঁশের সাঁকো। দুই পাশের হাতলের বেশিরভাগ অংশই ভেঙে গিয়েছিল। এমন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই কিছু শিক্ষার্থী পার হতো আবার কেউ বিকল্প পথে আট কিলোমিটার ঘুরে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করত।
জুতা হাতে নিয়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত ভিজে এ সাঁকো পাড়ি দেওয়ার সময় পা পিছলে নদের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। চলাচলের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ভেজা পোশাক আর বইখাতা নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হতো শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা।

যশোরের সদর উপজেলার কাশিপুরে ডাকাতিয়া ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বোলপুর গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়ী ভৈরব নদ পারাপারের একমাত্র সাঁকোটির দশা ছিল এমনই। ভাঙাচোরা এই সাঁকোটি ডুবে যায় এবারের বর্ষায়ও।
এমন পরিস্থিতিতে সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ডাকাতিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী যাওয়া আসা করত। গত ৩ অক্টোবর ঢাকা পোস্টে ভিডিওসহ ‘১৬ বছরে ব্রিজ তো হলোই না, সাঁকোটাও টিকে আছে কোনো মতে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপারটি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে।

সংবাদ প্রকাশের পর যশোর সদর উপজেলা প্রশাসন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে মজবুত একটি সেতু নির্মাণের উদ্যােগ নেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্বাবধানে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে বাঁশের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে শিক্ষার্থীসহ দু’পারের বাসিন্দারা। গত ২০ অক্টোবর সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়। সেতুটিতে কাঠের পাটাতনের ওপর বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে এবং দুপাশে দেওয়া হয়েছে বাঁশের হাতল বা বেষ্টনী। উপজেলা প্রশাসনের এমন উদ্যােগকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সবাই।
ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার রুমি ঢাকা পোস্টকে বলে, প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন অনেক কষ্ট করেছি। এখানে যে ভাঙা সাঁকোটি ছিল সেটি দিয়ে আসা যাওয়া করতাম। নদীতে পানি বেড়ে গেলে বা সাঁকো ভেঙে গেলে আর স্কুলে যেতে পারতাম না। এখন আর কোনো সমস্যা নেই, সুন্দরভাবে আসাযাওয়া করতে পারছি। স্কুলে আসা-যাওয়া করতে কোনো ঝুঁকি নেই এখন।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিম ও তৌফিক বলে, ভাঙাচোরা সাঁকো দিয়ে অনেক দিন স্কুলে আসা যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে গিয়ে জামা-কাপড় ও বই-খাতা ভিজে গেছে। শামুকে পা কেটে গেছে। এভাবে চলাচল করতে হয় জন্য আমার অনেক বন্ধু ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। যারা আমাদের এমন সুন্দর একটি ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছে তাদের আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

ডাকাতিয়া মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, ২০০৮ সাল থেকে বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকায় সাঁকোটি নির্মাণ ও সংস্কার করেছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিগত ১৬ বছর ধরে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন বাঁশের সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলেনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের এই দুর্ভোগ কমাতে পারিনি। প্রতি বছর বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকায় ৩-৪ বার মেরামত করতে হতো। এখানে একটা ব্রিজ চেয়ে অনেক দপ্তরে গিয়েছি। সর্বশেষ সাংবাদিকদের নজরে আসায় তারা এটা নিয়ে লেখালেখি করায় সদর উপজেলা প্রশাসন উদ্যােগ নিয়ে সুন্দর একটি চওড়া বাঁশের সেতু নির্মাণ করে দিয়েছে। যেটি দিয়ে এখন আর শিক্ষার্থীদের চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। এখন আমাদের দায়িত্ব এটিকে সংরক্ষণ করা, যাতে এর কোনো ক্ষতি না হয়। গণমাধ্যম এবং উপজেলা প্রশাসনকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যােগে সুন্দর একটি চওড়া মজবুত বাঁশের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারবে।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ