প্রতিনিধি 30 June 2025 , 7:07:31 প্রিন্ট সংস্করণ
আজ ১ জুলাই। তারিখটি এখন আর কেবল একটি দিন নয়, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাবিন্দু।
মাহতিম আহমেদ রাজা
ছাত্রদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে গড়ে ওঠা কোটা সংস্কার আন্দোলন আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এক দৃঢ় গণজাগরণে, যা বিশ্লেষকদের মতে, সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের বার্তা।
২০২৪ সালের ৫ জুন উচ্চ আদালতের রায়ে কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রতিবাদ থেকেই এই আন্দোলনের জন্ম। এর ধারাবাহিকতায় ৬ জুন ঢাবি গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়। শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন “আদালতের রায় মেনে নেওয়া হবে না, আগের পরিপত্রই থাকতে হবে।”
এ আন্দোলনের অন্যতম মুখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ওই সমাবেশে বলেন, “এটা কোনো ছাত্রদের একক লড়াই নয়, এটি একটি বৈষম্যবিরোধী জনগণের আন্দোলন। কোটা বাতিলের আগের পরিপত্র অবশ্যই বহাল রাখতে হবে।”
ছাত্রদের এই আন্দোলন একযোগে বিস্তার লাভ করে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বরিশাল, রংপুর, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ১ জুলাই থেকে মিছিল, সড়ক অবরোধ, সমাবেশের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বরিশালে নদীবন্দরের পাশে ছাত্রদের মানববন্ধন হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। ঢাকায় ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও ঢাবির আন্দোলনে অংশ নেন।
১ জুলাই-এই দিনেই শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি সর্বজাতীয় প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জানতাম ৩০ জুনের পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। তাই ঈদের বন্ধে আমরা পরিকল্পনা করি—সংগঠন গড়ি, নেটওয়ার্ক তৈরি করি, ক্যাম্পেইন চালাই। ১ জুলাই আমরা মাঠে নামার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি।”
এদিন আন্দোলনের বিস্তার, স্লোগান ও ছাত্রদের দৃঢ় অবস্থান দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ হ্যাশট্যাগে লাখো মানুষ সংহতি জানান।