প্রতিনিধি 27 August 2025 , 2:23:35 প্রিন্ট সংস্করণ
৩০০ পোশাক কারখানার অচলাবস্থার সমাধান চায় বিজিএমইএ
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক এক বছরের বেশি সময় ধরে তারল্যসংকটে ভুগছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক পাঁচটির তৈরি পোশাকশিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলোয়। ব্যাংক পাঁচটিতে এমন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩০০। রপ্তানি আয় দেশে এলেও সেই অর্থ সময়মতো রপ্তানিকারকদের পরিশোধ করতে পারছে না এই পাঁচ ব্যাংক। এমনকি ব্যাংকগুলো নতুন ঋণপত্র খুলতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এতে এসব ব্যাংকের গ্রাহক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়া পোশাক কারখানাগুলোর আর্থিক কার্যক্রমে সৃষ্ট অচলাবস্থার সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা। তাঁরা বলেছেন, ভুক্তভোগী কারখানাগুলো সময়মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারায় শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থী। বিজিএমইএর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক পাঁচটি হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ নজরুল ইসলাম মজুমদার ও অন্য চার ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কাছে।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক ফাহিমা আক্তার, পরিচালক এ বি এম সামছুদ্দিন, রিও ডিজাইনের চেয়ারম্যান মো. হারুক আহমেদ, ও’ডেল অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মোহাম্মদ মোহিত, ডে অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনওয়ার হোসেন পাটওয়ারি, একেএইচ ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম।
দুর্বল ব্যাংকের কারণে যেসব তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমস্যায় পড়েছে, তাদের সেসব সমস্যার কথা গভর্নরের কাছে তুলে ধরেন বিজিএমইএর সভাপতি। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মভাবে ক্ষুণ্ন করছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থাও কমাচ্ছে, যা শিল্পের জন্য মোটেও শুভ নয়।
বিজিএমইএর নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হবে। ফলে অনেক শ্রমিক ভাইবোন কর্মসংস্থান হারাবেন। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, যা মোটেও কাম্য নয়।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের প্রাপ্য টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে রপ্তানিকারকদের জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটানো যায়। পরে সমস্যাটির একটি স্থায়ী ও চূড়ান্ত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত সরকারের মেয়াদে অনিয়ম–দুর্নীতির কারণে এসব ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা জমানো টাকা উত্তোলন করতে পারছে না। এসব ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। একীভূত করতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ইতিমধ্যে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ বরাদ্দ পেলে ব্যক্তি আমানতকারীদের মধ্যে যাঁদের জমা টাকার পরিমাণ কম, তাঁদের অর্থ ফেরত দিতে শুরু করবে ব্যংকগুলো, এমন তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে।