জাতীয়

৫ মে ট্র্যাজেডির ১২ বছর: শাপলা চত্বর এখনো বিচারহীন এক কালরাত্রির নাম

  প্রতিনিধি 5 May 2025 , 8:19:14 প্রিন্ট সংস্করণ

শাহিনুর রহমান, বিশেষ প্রতিবেদক

২০১৩ সালের ৫ মে রাতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অভিযান পেরিয়ে গেছে ১২টি বছর। কিন্তু আজও হয়নি কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, হয়নি কারো বিচার। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকা ধর্মীয় দাবিসমূহ নিয়ে আয়োজিত সমাবেশটি রাত গভীর হতেই পরিণত হয় দেশের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্তে।

 

এপ্রিল-মে ২০১৩—ঢাকায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ব্লগারদের বিচারের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে সমাবেশের ডাক দেয়। ৫ মে রাত, রাজধানীর শাপলা চত্বরে জড়ো হয় লাখো মানুষ। সমাবেশটি প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণ থাকলেও, রাত ২টার পর শুরু হয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বিত অভিযান।

 

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার। মতিঝিল, পল্টন, বিজয়নগরসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। হেফাজতের দাবি অনুযায়ী, অভিযানে শতাধিক লোক নিহত হন। যদিও সরকারি পরিসংখ্যানে নিহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখানো হয়।

 

এমনকি, পরদিন দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অফিসে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে। সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়, যা সংবাদপেশার স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

 

ঘটনার পর থেকেই দেশের মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক মহল ও নাগরিক সমাজ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এক যুগেও সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি।

 

আজ ৫ মে, এই দিনটিকে স্মরণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বক্তারা বলছেন—৫ মে কেবল রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এটি মতপ্রকাশের অধিকার, ধর্মীয় চেতনা ও মানবাধিকারের ওপর নিষ্ঠুর আঘাতের প্রতীক।

 

ঘটনার ১২ বছর পরও জাতির সামনে রয়ে গেছে অসংখ্য প্রশ্ন:

কারা ছিলেন সেই রাতের মূল পরিকল্পনাকারী? কার আদেশে চালানো হয়েছিল এই অভিযান? কোথায় সেই রাতের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ?

 

সময় এসেছে—এই কালরাত্রির নিরপেক্ষ তদন্ত, দায়ীদের বিচার এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের। কারণ ইতিহাস বিচার চায়, আর ন্যায়বিচার ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণতা পায় না।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ

আরও খবর: জাতীয়

‎রক্তাক্ত জুলাইয়ের মহম্মদপুর: ছাত্রের রক্তে লেখা প্রতিবাদ, ইতিহাসে ‘দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ’ ‎

‎ডিসিবি টেলিভিশন এখন থেকে ‘চ্যানেল থার্টি সিক্স’ স্যাটেলাইট স্বপ্নে ‘দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ’-এর মাল্টিমিডিয়া শাখার নতুন অধ্যায়

যশোরে করোনা আতঙ্কে পণ্যের আগুন মাস্কের বক্সে ১৮০ টাকা বৃদ্ধি, স্যানিটাইজার উধাও!

বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই: দা দিয়ে কুপিয়ে ৫ রাজাকার হত্যা করেছিলেন যিনি

‎সুরের যোদ্ধা জসীম পারভেজ: টানাপোড়েনের মাঝেও যার স্বপ্ন ছুঁতে চায় বিশ্বসংগীতের আকাশ ‎

ঈদের ঘুম নয়, এ যেন নীরব কান্না! কোরবানির উৎসবের দিন যারা ঘুমিয়ে কাটালেন, তাদের গল্পটা কেউ শুনে না