অন্যান্য

৬ কোটি টাকার সেতু চলাচলের আগেই ভেঙে পড়ল খালে: নিম্নমানের নির্মাণকাজ ও দুর্নীতির অভিযোগ !

  প্রতিনিধি 25 July 2025 , 1:15:55 প্রিন্ট সংস্করণ

পিরোজপুর, ২৫ জুলাই ২০২৫: পিরোজপুরের নেছারাবাদে ভাতুরিয়া খালের ওপর নবনির্মিত ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি গার্ডার ব্রিজ চলাচলের আগেই ভেঙে খালে ধসে পড়েছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করার অভিযোগ উঠেছে এই সেতু নির্মাণে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।

নির্মাণকাজ শুরুর আগেই ত্রুটি, অবশেষে ধস

উপজেলার পূর্ব জলাবাড়ি গ্রামে ভাতুরিয়া খালের ওপরের এই ব্রিজের নির্মাণকাজ এক বছরে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছর লেগেছে। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এলেও ব্রিজের স্ল্যাবে ফাটল দেখা দেয়। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ পরিদর্শনে এসে ব্রিজের ঝুঁকিপূর্ণ স্ল্যাব অপসারণ করে সংস্কারের জন্য ঠিকাদারকে নোটিশ দেন। মঙ্গলবার ওই ব্রিজের সংস্কারকাজ শুরু করার আগেই ব্রিজের পুরো স্ল্যাব ভেঙে খালে পড়ে যায়।

কার্যাদেশ, ঠিকাদার ও নিম্নমানের কাজের বিবরণ

জানা যায়, পিরোজপুর এলজিইডি ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর মেসার্স ইফতি ইটিসিএলকে পূর্ব জলাবাড়ি খ্রিস্টানপাড়া থেকে মাদ্রা বাজার সড়কের ওপর ২২ ও ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়। এর চুক্তি মূল্য ছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিজ দুটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এই কাজের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজের সহোদর মিরাজুল ইসলাম। তবে ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম নিজে কাজ না করে একজন সাব-কন্ট্রাক্টরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিলেন। কাজের নিম্নমান এবং শিডিউল মেনে কাজ না করার কারণে স্থানীয়রা শুরুতেই বাধা দেন। পরবর্তী সময়ে আরেক সাব-কন্ট্রাক্টর গত বছরের শেষ দিকে গার্ডার ছাড়াই সেতুটির ছাদ ঢালাই দেয়। তবে এর কিছুদিন পরেই ঢালাই দেওয়া অংশে ত্রুটি দেখা দেয়। স্থানীয়দের আপত্তির মুখে এলজিইডি তদন্ত করে সেতুটির ঢালাই দেওয়া অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী গত মঙ্গলবার সেতুটির ত্রুটিপূর্ণ অংশটির অপসারণ শুরু করতেই পুরো স্ল্যাব ভেঙে খালে ধসে পড়ে।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও দুর্নীতির অভিযোগ

স্থানীয় বাসিন্দা দিপু মিস্ত্রি বলেন, “এই ব্রিজটি চার বছর ধরে দফায় দফায় ঠিকাদার কাজের লোক বদলানো হচ্ছে। কাজ শুরুর দিকে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ব্রিজ হচ্ছিল। শিডিউল অনুযায়ী উপকরণ না দেওয়ায় ব্রিজের স্ল্যাব ফেটে যায়। পরে কাজ ফেলে রেখে সরে যান ঠিকাদার। ফের এটা সংস্কারের জন্য আসে। সংস্কার শুরুর আগেই পুরো ব্রিজ ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় স্থানীয়রা এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেতু নির্মাণে অকল্পনীয় দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।

প্রকৌশলীর বক্তব্য ও ঠিকাদারের আত্মগোপন

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রায়সুল ইসলাম জানান, কাজ নিয়ম অনুযায়ী না হওয়ায় পুরো স্ল্যাব (ছাদ) ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণকাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মূল ঠিকাদারকে পাওয়া না যাওয়ায় কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে মিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ