চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধিঃ ইয়াসিন আরাফাত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবিনগরে সাত বছর আগে ২০১৭ সালে কোচিং সেন্টার থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া শিক্ষককে ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের ধূলাউড়ি হাটে মানববন্ধনের আয়োজন করে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গ্রামবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেবিনগর এলাকায় জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন আরিফুল ইসলাম। ২০১৭ সালের ০১ জুলাই দুপুরে দেবিনগরে কোচিং সেন্টার চলাকালীন সময়ে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে আটক করা হয়। এরপর পুলিশের সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও তারা অভিযোগ আমলে নেয়নি। উল্টো নানারকম ভয়ভীতি দেখায় আরিফুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের।
স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মীদের মদদেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন কোচিং শিক্ষক আরিফুল ইসলামের পরিবার। তারা বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে জীবিত অবস্থায় ফেরত না দিলে গুমের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে না থাকলেও শুধুমাত্র বিএনপি পরিবারের সদস্য হওয়ায় তাকে গুম করা হয়েছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।
কোচিং শিক্ষক আরিফুলের স্ত্রী মাজেরা বেগম বলেন, আমার স্বামী গুম হওয়ার পর থেকে দুইটি সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। দুটি সন্তান নিয়ে অপেক্ষায় করতে করতে দুচোখে শুধু অন্ধকার দেখছি। সন্তানদের ভরনপোষন ও পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সন্তানদের একটি ভালো পোষাক কিংবা দুবেলা দুমুঠো ভাত ঠিকমত দিতে পারিনা। পরিবারে নেমে এসেছে এক কালো অধ্যায়। যখন আমি স্বামী হারার শোকে শোকাহত তখন বিভিন্ন অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে জিডি কিংবা মামলা না করার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, স্বামীকে অনেক খুজাখুজির পর কোন সন্ধান না পেয়ে সকল হুমকি উপেক্ষা করে জিডি করার জন্য থানায় গেলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে আমার জিডি নেয়া হয়নি। উল্টো আমার সামনে আমার জিডির কপি ছিড়ে ফেলা হয়। এমনকি তৎকালীন ওসি আর থানায় না আসার জন্য হুমকি প্রদান করে। এদিকে, ছেলের শোকে আমার শশুর ২০১৭ সালের ৫ আগষ্ট প্যারালাইসিস হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর অসুস্থ থেকে গুম হওয়া ছেলে আরিফুলের শোকে ২০২২ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
মানববন্ধনে আরিফুর ইসলামের মা শরিফুন বেগম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আমার ছেলে জীবিত আছে। তাই তাকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই। ফেরত না দিলে আমরা মামলা করব। ছেলেকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, গুম হওয়া কোচিং শিক্ষক আরিফুর ইসলামের মা শরিফুন বেগম, স্ত্রী মাজেরা বেগম, ছোট ভাই সোহেল রানা, মেয়ে মাহমুদা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ ক ম সাহেদুল আলম বিশ্বাস পলাশ, দেবীনগর দ্বিমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক তবিউল ইসলাম তারিফ, স্থানীয় বাসিন্দা দুরুল হুদাসহ অন্যান্যরা।