কবিতা

কবিতাঃ- আমাকে কেউ চায়নি, তাই আমি সবার হতে চেয়েছিলাম // কলমেঃ- মোঃ সাগর বিশ্বাস

  প্রতিনিধি 10 July 2025 , 3:23:06 প্রিন্ট সংস্করণ


আমাকে কেউ চায়নি তাই আমি সবার হতে চেয়েছিলাম

প্রিয় সহোদর…

আমি আজ কোনো ভাষণ দিতে আসিনি,

কোনো প্রাপ্তির তালিকা হাতে এনে দাঁড়াইনি কারো সামনে,

আমার কণ্ঠে যদি কোনো আগুন থাকে,

সেটা কোনো বিপ্লবের শ্লোগান নয়,

সেটা কেবল এক অব্যক্ত বিষাদ,

যা চেপে রেখেছি বছরের পর বছর।

আমি কবি নই…

আমি কোনোদিন ছিলাম না সাহিত্যের অলংকৃত রাজপথে হাঁটা কোনো মনীষা,

আমার ভাষা এসেছে ঘামের গন্ধ থেকে,

এসেছে ফাটা চামড়ার ভিতর জমে থাকা না বলা কথার গভীর থেকে,

আমি শুধু চেয়েছি,মানুষ হোক মানুষ।

ভয় পাই,

যখন দেখি মানুষের চেহারার ভেতর লুকিয়ে আছে পশু,

যখন দেখি

নিজের স্বার্থে মানুষ চোখ বন্ধ করে দেয় অন্যের মৃত্যুতে,

ভয় পাই,

যখন দেখি মানুষ ভালোবাসে শুধু নিজের মতো মানুষকে,

নিজেদের বেছে নেয় “মানুষ” বলে,

আর যাদের জীবন, ভাষা, ধর্ম বা দারিদ্র্যে আলাদা

তাদের অমানুষ বানিয়ে ফেলে,

তাদের মুখে হাসি ফোটাতে নয়, বরং ব্যঙ্গ করে, উপহাস ছুঁড়ে দেয়।

আমার শৈশব শুরু হয়নি কোনো খেলাঘর থেকে,

আমি জানি না মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদা কাকে বলে,

আমি বড় হয়েছি আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে রুটি বানিয়ে,

আমার হাতে কলম ওঠার আগেই হাতে উঠেছে গরম কাঁসার থালা।

পাশে কেউ ছিল না,

ভালোবেসে কেউ বলেনি, “এই ছেলেটা একটু বিশ্রাম পাক।”

মানুষ আমাকে দেখেছে, কিন্তু বোঝেনি,

ভালোবেসে কেউ কাছে ডাকেনি।

আমি হয়তো তাই,

ভিখারির মতো ভালোবাসার দরজায় ঘুরে ঘুরে শুধু তাকিয়ে থেকেছি।

আমি কবি হতে চাইনি, আমি নেতা হতে চাইনি,

আমি মঞ্চ চাইনি, করতালি চাইনি, অভিনন্দনও নয়।

আমি শুধু চেয়েছিলাম,

কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রাখুক,

কেউ একজন বলুক,

“তুই থাকলে আমার পাশে, আমি বাঁচতে পারি।”

কিন্তু আজকের সমাজে ভালোবাসা এক বিলাসিতা,

এখানে কান্না নিয়ে কথা বলা দুর্বলতার পরিচয়।

এখানে পাশের মানুষটাকে জড়িয়ে ধরার আগে ভাবতে হয়,

“মানুষ কী বলবে?”

তোমরা বলো সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে,

কিন্তু কাদের নিয়ে?

যেখানে রাস্তায় শিশুরা খালি পেটে ঘুমায়,

আর কিছু মুখোশধারী মানুষ

মদের গ্লাসে মানবতা ডুবিয়ে ফেলে।

যেখানে ধর্ম দিয়ে বিভাজন, ভাষা দিয়ে বিদ্বেষ,

আর নিজের সুবিধা মানেই অন্যের ক্ষতি

সেখানে সভ্যতা নয়,

চলে প্রতিযোগিতা, কার আগে কে পশু হবে।

আমি কারো বিরুদ্ধে নই, আমি মানুষের পক্ষে।

আমি শুধু বলি,

এই প্রতিটি মুখ, প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি হাত,

এদের মাঝে যদি একটুখানি জায়গা রাখে ভালোবাসার,

তবে হয়তো আর কাউকে অনাহারে মরতে হবে না,

কেউ আর একাকী কাঁদবে না।

আমার জীবনে কিছুই ছিল না,

তবু আমি চেয়েছিলাম, এই শূন্য জীবন কারো মনে জায়গা পাক।

কারো গল্পে আমি যেন একটি ‘নাম’ হয়ে থাকি।

অনেকে বলে আমি সৌভাগ্যহীন,

হয়তো ঠিকই।

আমার কপালে ছিল না পরিচয়,

ছিল না প্রতিভার শিরোপা।

তবু আমি বলি

আমার সৌভাগ্য এই যে, আমি অন্ধকার দেখেছি।

সেই অন্ধকারে আমি চেনা মুখগুলোর মুখোশ খুলে ফেলতে পেরেছি,

সেই অন্ধকারে আমি বুঝেছি ভালোবাসা কত দূরে থাকে,

আর একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে

এই সমাজ কত কৃপণ।

প্রিয় সহোদর…

আমি যদি একদিন আর ফিরে না আসি,

যদি তোমরা একদিন শুনো

“সে চলে গেছে বুকভরা অভিমানে…”

তখন দয়া করে আমায় খুঁজে ফিরো না,

এই ভাঙাচোরা, ক্ষুদ্র মানুষটিকে খুঁজে

তোমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করো না।

শুধু একটা কাজ করো,

তোমাদের আশেপাশে তাকিও,

দেখো কেউ একা আছে কি না,

কেউ কাঁদছে কি না,

তার পাশে একটু দাঁড়িয়ে থেকো।

সেখানেই আমাকে পাবে।

আমি আবার বলছি…

আমি কবি নই, তাই আমার ভাষায় অলংকার নেই,

আমি শুধু চেয়েছিলাম,এই পৃথিবীতে সবাই কারো না কারো হোক,

কেউ যেন না থাকে অবহেলায়,

কেউ যেন না হারায় একাকীত্বে।

আমি নিজে পাইনি,

তাই চেয়েছিলাম আর কেউ যেন হারিয়ে না যায়!

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ