প্রতিনিধি 23 January 2025 , 11:04:57 প্রিন্ট সংস্করণ
মো: ইয়াছিন আলম :
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে তখন রীতিমত ইট বৃষ্টি চলছে। ঢাল সড়কি নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে মত্ত উভয় শিবির। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুটা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চেষ্টা চালাচ্ছেন সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষদ্বয়কে নিবৃত করতে। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে জ্যাকেট কিংবা হেলমেট ছাড়াই দৌড় জুড়লেন উভয় পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে।
রীতিমত চমকে দেয়ার মত এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রানী খাতুন। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও কোন ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই ‘বাটল ফিল্ডে’ তার এমন উপস্থিতি চমকে দিয়েছে সবাইকে। সাহসিকতাপুর্ন তার এমন ভুমিকার জন্য সাধারণ মানুষসহ দু’পক্ষই রীতিমত তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকাল পাঁচটার দিকে এমন দুঃসাহসিক কান্ড ঘটিয়ে রনী খাতুন এখন শ্যামনগরের মানুষের কাছে ভাইরাল ইউএনওর খেতাব পেয়েছেন।
জানা যায়, কমিটি নিয়ে বিএনপির কমিটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছে। ইতিমধ্যে উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদপন্থী নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান পন্থীদের দু’দফা সংঘর্ষ হয়েছে গত ১৯ ও ২০ জানুয়ারী।
এসবের ধারাবাহিকতায় বুধবার উভয় পক্ষ শ্যামনগর উপজেলা সদরে পৃথক কর্মসুচি আহবান করায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিকাল চারটার কিছু আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী উৎপল মন্ডল ও আব্দুল হালিম সহ অপারপর সংবাদকর্মীরা জানান বংশীপুর থেকে নেতাকর্মীরা শ্যামনগরে প্রবেশের পথে প্রশাসনের বাধায় পিছু হটে। একপর্যায়ে তারা ফিরে যাওয়ার সময় ইসমাইলপুর এলাকায় পৌছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে উক্ত নারী কর্মকর্তা নিজের দেহরক্ষী আনছার সদস্যসহ সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পিছু ফেলে দৌড়ে চলে যান সংঘর্ষের মধ্যে। এসময় তার পাশে থাকা সাইফুল নামের এক আনছার সদস্য বুকে ও শ্যামনগর থানার ওসি হুমমায়ুন কবীর পায়ে ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হলেও দ্রুত মাঝখানে পৌছে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় তার উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পক্ষদ্বয় কিচুটা রণে ভংগ দেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাতকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেন।
এবিষয়ে সোলায়মান কবীরের পক্ষের যুবদল সভাপতি শফিকুল ইসলাম দুলু জানান, একজন নারী হয়ে তিনি অনেক সাহসী ভুমিকা রেখেছেন। কিভাবে তিনি এমন দুঃসাহসিকতা দেখালেন বোঝা যাচ্ছে না।
আব্দুল ওয়াহেদ পক্ষের জেলা বিএনপির সদস্য আশেকই এলাহী মুন্না জানান, অলৌকিকভাবে ইউএনও ম্যাডাম রক্ষা পেয়েছেন। তবে তিনি ঐভাবে সংঘর্ষের মধ্যে ঢুকে চরম বোকামির কাজ করেছেন। তার কারনে পরবর্তীতে সংঘর্ষ থামানো গেছে বলেও মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, তিনি জ্ঞাতসারে এমন কাজ করেছেন। আরও বেশী ক্ষতি হওয়ার আগেই সংঘাত থামাতে কাউকে না কাউকে পদক্ষেপ নিতে হতো। তিনি সকলকে শান্তিপুর্ন পরিবেশ বজার রাখার আহবান জানান।
ছবিঃ সংঘর্ষের সময় ইট বৃষ্টির মধ্যে সহকর্মীদের পেছনে ফেলে দৌড়াচ্ছেন ইউএনও রনী খাতুন।
মো: ইয়াছিন আলম
০১৯৮৮০০০০৫২