অন্যান্য

কুমড়ো পঁচা, জালি বা কড়া নষ্ট হওয়ার কারন ও প্রতিকার।

  প্রতিনিধি 22 February 2025 , 3:59:35 প্রিন্ট সংস্করণ

 

জি এম ফিরোজ উদ্দিন 

 

যারা কুমড়ার চাষ করেন তাদের অনেককেই একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

আর সেটা হচ্ছে- কুমড়ার কড়া বা ছোট ফল পচে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া বা মারা যাওয়া।

যে সকল কারনে কুমড়ার কড়া নষ্ট হতে পারে:

 

১. পরাগায়ণ না হওয়া।

২. মাছি পোকার আক্রমণ।

৩. ক্যালশিয়ামের অভাব।

৪. ছত্রাকের আক্রমণ।

৫. মাটিতে শক্তি/উর্বরতার অভাব।

৬. গাছের দুর্বলতা।

৭. মাটিতে রসের অভাব।

 

প্রধানত প্রথম তিনটি কারনে কুমড়ার ফল বা কড়া পচে যায়। তাই এই তিনটির বিস্তারিত বর্ণনা ও এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

পরাগায়ণ না হওয়া:

অতিরিক্ত কীটনাষক ব্যবহারের ফলে মৌমাছি বা প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারনে পরাগায়ণে সমস্যা হচ্ছে। পরাগায়ণ না হলে কচি কড়া বাঁচাতে পারে না মারা যায়।

লক্ষণ:

কড়াগুলো একেবারে ছোট অবস্থায় মারা যাবে। স্ত্রী ফুল ফোটার পর সে কড়া আর একটুও বড় হবে না।

কচি কুমড়ার ফুলের অংশ থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বোটা পর্যন্ত কালো হয়ে পচে/শুকিয়ে যাবে।

সমাধান:

হাত দিয়ে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ণ করা। কুমড়া ফুল ভোর ৩.০০টা থেকে ভোর ৪.০০টা পর্যন্ত ফুটতে শুরু করে এবং ভোর ৫.০০টা থেকে ৬.০০ টার মধ্যে সর্বোচ্চ ফুল ফোটে। ফুল সাধারণত ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। ফুটন্ত ফুল সকাল ৮.০০টা থেকে বন্ধ হওয়া শুরু করে এবং ১১.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হবে।

 

সদ্যফোটা পুরুষ ফুল ছিঁড়ে পুংরেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। এরপর পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়।

ক্ষেতের চারিদিকে ফুল গাছ, সরিষা বা শিম গাছ লাগানো যায়।

মাছি পোকার আক্রমণ:

 

ফলের মাছি পোকা কচি কুমড়াএর ভেতরে অভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম ছেড়ে দেয়। এতে কুমড়া পচে নষ্ট হয়ে যায়।

 

লক্ষণ:

 

কুমড়া একটু বড় হয়ে পচবে।

ক্ষেতে মাছি পোকার উপস্থিতি দেখা যাবে।

কুমড়ার গায়ে ফুটো করার সময় বাদামি রঙ্গের আঠা বের হতে দেখা যায়।

ফলের আক্রান্ত স্থানে ফুটো ও ফল বাকা হয়ে যেতে পারে।

আক্রান্ত ফলটি কাটলে কীড়া দেখতে পাওয়া যাবে।

 

পরীক্ষা:

 

কচি কুমড়া ছিড়ে তার ফুটো করা স্থানটি নির্বাচণ করুন, ব্লেড অথবা আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে চোচা ছুলাই করতে থাকুন আর ভেতর দিকে খুবই শক্তি দিয়ে চাপ দিন। দেখবেন, খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা লম্বা সুচালো টাইপের ডিম বের হয়ে আসবে।

 

অনেক সময় আক্রান্তের শেষ পর্যায়ে ফুটোটা বড় হয়ে যায়, সেখানে অনেক মাছি একসাথে লেগে থাকে। সেখানে ক্ষুদ্র ডিম বা কীড়ার উপস্থিতিও পাওয়া যায়। কুমড়া পচে গেলে সেটা কেটে ফেললে ভেতরে একটু বড় বড় কিলবিলে পোকা পাওয়া যায়, এরা লাউ/মিষ্টি কুমড়ার ভেতরের নরম অংশ খেয়ে বেচে থাকে।

এই ধরনের কীড়ার উপস্থিতি না দেখলে অযথা মাছি পোকার দোষ দিয়ে কোন লাভ নাই।

 

ফল বিকৃত হবে এবং ফল না বাড়ার কারণে ফলন কমে যায়।

 

সমাধান:

ভালোভাবে জমি চাষ করতে হবে। পোকা আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কচি ফল গুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

সঠিক নিয়মে ফেরোমন ফাদ স্থাপন করা এবং তার ডিটারজেন্ট পানি নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে।

 

বিষ টোপ ব্যবহার করেও মাছি পোকা দমন করা যায়। সে ক্ষেত্রে বিষ টোপ তৈরি করার জন্য 100 গ্রাম থেঁতলানো কুমড়ার সাথে ১০০ গ্ৰাম পানি দিয়ে ০.২৫ গ্ৰাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে ঢেলে টপ বা ড্রামের কাছে রেখে দিন দেখবেন বিভিন্ন রকম পোকা এর মধ্যে আসবে এবং মারা পড়বে। এই বিষ টোপ এর কার্যকারিতা তিন থেকে চার দিন ধরে থাকে। চার দিন পর পর এটি পরিবর্তন করে দিতে হবে।

 

আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

জমিতে ক্যালশিয়ামের অভাব হলে:

 

লক্ষন:

 

১। আক্রান্ত গাছে প্রথমে কচি কুমড়ার নিচের দিকে পঁচন দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পুরো ফলটিই পঁচে যায়

 

২। সাধারণত আম্লীয় মাটিতে বা ক্যালসিয়ামের অভাব আছে এমন জমিতে এ রোগ দেখা যায়।

 

সমাধান:

ক্ষেতে পরিমিত সেচ দেয়া ।

গর্ত বা পিট প্রতি ৫০ থেকে ৮০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করা ।

মাটি পরীক্ষা করে চারা রোপনের ১৫ দিন পূর্বে জমিতে শতাংশ প্রতি চার কেজি হারে ডলোচুন প্রয়োগ করলে পরপর আর তিন বছর প্রয়োগ করতে হবেনা।

ফেসবুক থেকে সংগ্রহ

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ