অন্যান্য

সালিশে দেড় লাখ টাকায় শিশু ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

  প্রতিনিধি 9 March 2025 , 7:17:30 প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টাঙ্গাইলে ১০ বছর বয়সী মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে। পরে ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোরপূর্বক গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সালিশে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দেড় লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ধরিয়ে দেওয়া হয় ৯২ হাজার টাকা। পরে ঘটনা জানাজানি হলে ১০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শা‌স্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা।

 

অভিযুক্ত সিএনজি চালকের নাম ফিরোজ (৪৫)। তিনি উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন ওরফে নওশের আলীর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক।

স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই শিশু ও তার পরিবার ভয়ে মুখ না খুললেও ঘটনাটি সম্প্রতি জানাজানি হয়। যদিও ধামাচাপা দিতে এলাকার মাতাব্বররা গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করে। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষককে জরিমানা করা হয় দেড় লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯২ হাজার টাকা দিলেও জরিমানা বাকি রয়ে গেছে ৫৮ হাজার টাকা। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে থানা পুলিশ ভুক্তভোগী শিশু এবং তার মাকে থানায় নিয়ে এসে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অটোরিকশা চালক ফিরোজ শিশুটির নানির বাড়ির পাশের জমিতে সার দিচ্ছিল। এ সময় ওই জমির সঙ্গেই শিশুটি বড়ই কুড়াচ্ছিল। তখন ফিরোজ শিশুটিকে কৌশলে ডেকে একটি টয়লেটের ভেতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের কথা কাউকে বললে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখানো হয় শিশুটিকে। ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে শিশুটি চুপচাপ থাকায় সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে বারবার জিজ্ঞেস করায় একপর্যায়ে কান্না করে পুরো ঘটনা মাকে খুলে বলে ওই শিশু। ধীরে ধীরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনার ধামাচাপা দিতে স্থানীয় আবদুল মালেক, ইউনূস, বাবলু ও নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন মাতাব্বর ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করেন। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গ্রাম্য মাতাব্বরদের চাপের মুখে সালিশটি মেনে নেয় অসহায় পরিবারটি। তবে জরিমানার টাকাগুলো এখনও ভুক্তভোগী পরিবারকে দেওয়া হয়নি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ফিরোজ আত্মগোপনে রয়েছেন।

 

শিশুটির মা বলেন, ‘তার স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী। আমি নিজেও একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছি। ঘটনার কথা কাউকে ভয়ে প্রকাশ করতে পারিনি। আমাদের পাশে দাড়ানোর মতো কোনো অভিভাবক নেই। গ্রামের মাতাব্বদের কারণে সালিশ মেনে নিয়েছি। মেয়ের বাবাও ঘটনা শুনেছেন। আমরা অপরাধীদের বিচার দাবি করছি।’

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফিরোজকে প্রধান করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

Rtv

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ