অন্যান্য

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার দোকান বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

  প্রতিনিধি 12 March 2025 , 10:59:05 প্রিন্ট সংস্করণ

আনোয়ার সাঈদ তিতু

 

রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে বাজারে সবজি বিক্রি করি। পৌরসভার কাঁচাবাজারে শেডের একটা দোকান নিতে ধারদেনা করে ১ লাখ টাকা জোগাড় করি ইঞ্জিনিয়ার স্যারের কাছে গেছিলাম। হাত ধরি কত অনুরোধ করনু তবুও দোকান দিল না। স্যারের সাফ কথা–২ লাখ টাকা নেবো, এক লাখ টাকার রসিদ দিব। বাকি টাকা জোগাড় করবার পারি নাই, দোকান নেয়া হয় নাই।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুরের সরদারপাড়া গ্রামের দরিদ্র সবজি ব্যবসায়ী রমজান আলী।

 

একই অভিযোগ ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন, মকবুল হোসেন, আনছার আলীসহ অনেকের।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে রাস্তা সংস্কারসহ সুপারমার্কেট, কাঁচাবাজার (শেড) ঘর বরাদ্দে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ফলে পাঁচ বছর আগে শেষ হওয়া মার্কেট আজও চালু হয়নি।

 

জানা গেছে, ২০২০ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁচাবাজার শেড ও তিনতলা সুপারমার্কেটের কাজ শেষ হয়। পরে সুপারমার্কেটে ৩০টি দোকান ও ৭টি শেড ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি দোকান ও শেডের জন্য লিজ মানি বাবদ (জামানত) এক লাখ টাকা নেওয়ার কথা। আদায় করা হয়েছিল দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাড়তি টাকা আদায় করা হলেও রসিদ দেওয়া হয় এক লাখ টাকার। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অর্ধেক টাকার রসিদ দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঘর নিচ্ছেন না। তারা অর্থ ফেরত চেয়ে আবেদন করায় বিপদে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ২২ জন ব্যবসায়ী বরাদ্দের টাকা ফেরত নিয়েছেন। দুই কর্মকর্তার এমন অনিয়মে পৌরসভা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

কাঁচাবাজারের ২৮ নম্বর শেডের মালিক আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার কাছে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ১ লাখ টাকার রসিদ দিয়েছে পৌর কতৃরপক্ষ। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা কেন বেশি দিব।’

 

আইয়ুব আলীর মতো ২৭ নম্বর ঘরের মালিক আব্দুর রাজ্জাক ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ১৩ নম্বর ঘরের মালিক শাহজাহান আলী ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। দু’জনকেই ১ লাখ টাকার রসিদ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন, পৌরসভা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য শেড করে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে গরিবের ওপর জুলুম করছে। আমরা টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করেছি। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা ঘর নেব না।

 

এখানেই থেমে নেই দুই কর্মকর্তার অনিয়ম। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেও ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছেন। রসিদ ছাড়া আদায় করা এ টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে ভাগবাটোয়া করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

সহকারী প্রকৌশলী শাহীনুর রহমান অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, কাউকেই রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। কেন দিচ্ছেন না প্রশ্ন করলে সদুত্তর দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা।

 

এ প্রশ্ন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মাহবুবুল আলমকে করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক লাখ টাকাই নেওয়া হয়েছে। বাড়তি টাকা তারা কাকে দিয়েছেন আমি জানি না।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নয়ন কুমার সাহা বলেন, ব্যবসায়ীদের কয়েকজন বরাদ্দের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন। কীভাবে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া যায় তা দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা করা হবে।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ