অন্যান্য

টবে আঙ্গুর চাষাবাদ পদ্ধতি।

  প্রতিনিধি 17 March 2025 , 9:09:41 প্রিন্ট সংস্করণ

 

জি এম ফিরোজ উদ্দিন 

 

বাড়ির আঙিনা বা ছাদে টবে খুব সহজে আঙ্গুরের চাষ করতে পারেন। কারন জমি হতে ছাদের পরিবেশ ভিন্ন সেখানে আর্দ্রতা কম, সূর্যালোক বেশি এবং ছাদের মেঝে প্রায় বেশির ভাগ সময়ই শুষ্ক থাকে। ইচ্ছে করলে ছাদের টবের মধ্যে যেনো বৃষ্টির পানি না যায়, সে ব্যবস্থাও করা সম্ভব। এ ছাড়াও একটি আঙুরের গাছের ক্যানোপি অন্যান্য ফল গাছের তুলনায় কম বলে বড় সাইজের টবে, ড্রামে বা জিও ব্যাগে আঙুর গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত মাটি পানি ও পুষ্টির নিশ্চিত ব্যবস্থা করা সম্ভব।

জাত নির্বাচন:

আঙুরের যে জাতগুলো কম সময়ে পরিপক্ব হয়, সেই জাতকে ছাদে সহজেই চাষ করা সম্ভব। আগাম বা কম সময়ে পরিপক্ব হয় এমন জাতের মধ্যে বাইকুনুর, ব্ল্যাক ম্যাজিক, ডিক্সন, গ্রিন লং, লোরাস, নাডু সিডলেস ইত্যাদি জাত কম সময়ে পরিপক্ব হয়।

টবের আকার:

আঙুর গাছের শিকড় এক মিটার পর্যন্ত গভীরে যেতে অভ্যস্থ, তাই আঙুরের ফলনের জন্য এবং অনেক বছর গাছটিকে টবে রাখতে চাইলে ২৪ ইঞ্চি টব বা তার চাইতেও বড় মাপের টবে রাখতে হবে। আঙুর চাষের জন্য সদ্য প্রস্তুতকৃত টবে, ড্রামে বা জিও ব্যাগে চারা রোপণ না করে অপেক্ষা করতে হবে ৪ (চার) থেকে ৬ (ছয়) সপ্তাহ। তৈরি করে রাখা টবের মাটিতে প্রতি সপ্তাহে সীমিত পরিমাণ পানি সেচ দিতে হবে।

মাটি ব্যবস্থাপনা:

আঙুর গাছের পছন্দ বেলে দোঁ-আশ, বেলে লাল দোঁ-আশ, কাদা বেলে দোঁ-আশ, লাল দোঁ-আশ ইত্যাদি। টব প্রস্তুতির জন্য উল্লেখিত মাটি না পেলে নদীর বালি মাটি, পলিমাটি, ভার্মি কম্পোস্ট ইত্যাদি মিশ্রিত করে মাটি তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।

মাটি তৈরির সময় ২ ভাগ নদীর বেলে মাটি/ বেলে দোআঁশ মাটি, ২ ভাগ জৈবসার/ ভার্মি কম্পোস্ট, ১ ভাগ ১ ভাগ কোকোপিট, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়া, ১ কেজি ডোমার বা সিলেট স্যান্ড মিশ্রিত করে আঙুরের টবের মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। কোনো রকম নেমাটোড যেনো এই মাটিতে না থাকে সেজন্য মাটি শোধন করতে হবে। প্রস্তুতকৃত মাটি ছাদে পাতলা করে বিছিয়ে কালো পলিথিন দিয়ে বায়ুরোধী করে সপ্তাহখানেক ঢেকে রাখতে হবে। অন্য পদ্ধতি হিসাবে মাটি থেকে নেমাটোড মুক্ত করার জন্য কার্বোফিউরান বা ফিপ্রোনিল গ্রুপের কীটনাশক পরিমাণ মতো মিশ্রিত করে (২৪ ইঞ্চি টবে ২৪ গ্রাম হারে) নিতে হবে।

চারা নির্বাচন ও রোপণ:

আঙুর চারা রোপণের সঠিক সময় শীতের শেষে, বসন্তের শুরুতে। স্বাস্থ্যবান চারা নির্বাচন করতে হবে।

সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা :

আঙুর গাছের পানি চাহিদা কম, তাই নিয়মিত অথচ স্বল্প সেচ এই ফলের জন্য যথেষ্ট। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন সকালে সেচ দিতে হবে। সকালে ছাদের ও টবের তাপমাত্রা সেচের পানির প্রায় সমান থাকে। প্রতিদিন বিকালে টবের মাটি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, বাড়তি সেচ প্রয়োজন হলে তা সকাল বেলা সেচের পানি বাড়িয়ে দিতে হবে। ছাদ ভিজিয়ে ও টবের মাটি স্যাঁতসেতে করে আঙুরের টবে সেচ দেওয়া একদম অনুচিত।

সার প্রয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে, আঙুরের জন্য ভার্মিকম্পোস্ট, খৈল ও হাঁড়ের গুঁড়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। ১ মুঠো সরিষার খৈল, ১ মুঠো ভার্মি কম্পোস্ট, ২ চামচ হাড় গুড়ো এবং ১ চামচ পটাশ একসাথে মিশিয়ে প্রতি মাসে একবার করে প্রয়োগ করতে পারেন। আঙুর গাছে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রন ঘাটতি দেখা যায়। এই অণুখাদ্যগুলো টবের মাটিতে পানিতে গুলে দেয়া উত্তম। ছাদের গাছে অনুখাদ্য পাতায় স্প্রে করে দিতে চাইলে অবশ্যই অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে কম মাত্রায় সকালে বা বিকেলে স্প্রে করতে হবে। আঙুরের টবে ইউরিয়া প্রয়োগ প্রয়োজন পড়বে না, টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন থাকলে শীতের শেষে আঙুর গাছ প্রুনিংয়ের পরপর প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সারের ক্ষেত্রে সালফেট অব পটাশ নির্বাচন করা উত্তম।

গাছের কান্ড ছাঁটাই এবং পরিচর্যা করবেন যেভাবে

আঙ্গুরের বীজ বা চারা বপনের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছেঁটে দেওয়া উত্তম। এতে এই ফল গাছের ফলন বৃদ্ধি পাবে এবং ফুল ঝরে পড়াও অনেক কমে যায়। ছাঁটাই এর ৭ দিন আগে এবং পরে গাছের গোড়ায় হালকা পানি সেচ দিতে হবে।

চারা বপনের পর মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কাণ্ড ছাড়া অন্য সকল পার্শ্বের শাখা ছাঁটাই করে দিতে হবে।

প্রথম ছাঁটাই:

 

মাচায় ৩৫ থেকে ৪৫ সে.মি. কান্ড ওঠার পর প্রধান কান্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হয় যাতে এই কান্ডের ২ দিক থেকে ২-৪ টি করে শাখা গজায়।

 

দ্বিতীয় ছাঁটাই:

 

গজানো শাখাগুলো বড় হয়ে ১৫ থেকে ২০ দিনের মাথায় ৪৫-৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন এগুলো শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে; এতে অনেক গুলো শাখা-পাশাখা গজাবে।

তৃতীয় ছাঁটাই:

 

এই শাখা-পাশাখা গুলো ১৫ থেকে ২০ দিনের মাথায় ৪৫-৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে।

ফলন:

 

পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছ না হলেও ৩-৮ বছর ফলন দিতে পারে। একটি হিসাবে দেখা গেছে আমাদের দেশে ৯ বর্গমিটার জায়গায় ৪-৫টি আঙ্গুর গাছ লাগিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১৬ কেজির মত আঙ্গুরের উৎপাদন সম্ভব।

 

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ