অন্যান্য

নেত্রকোনা-৪ আসনে ভোটের লড়াইয়ে বিএনপি-জামায়াত

  প্রতিনিধি 25 March 2025 , 7:21:02 প্রিন্ট সংস্করণ

আবু কাউসার রাহী
খালিয়াজুড়ী উপজেলা প্রতিনিধি। 

নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৪ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা চুড়ান্ত না হলেও নির্বাচনী এলাকায় আগাম আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। এই আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এলাকার উন্নয়নের রুপকার সাবেক সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে সম্ভাব্য ভোটের লড়াইয়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদারের নাম ঘোষনা করা হয়েছে।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী লুৎফুজ্জামান বাবর সর্বপ্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক প্রকাশনা সম্পাদক লুৎফুজ্জামান বাবর সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের তীব্র রোষানলে পড়েন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে আবদ্ধ ছিলেন। সম্প্রতি তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তিলাভের দিন নেত্রকোনার লক্ষ লক্ষ বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারন মানুষের সঙ্গে ঢাকাস্থ কমিউনিটি বাবরের মুক্তির কাফেলায় অংশ গ্রহণ করে। প্রানপ্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য কয়েক কিলোমিটার মহাসড়কের উভয়পাশে সাধারন জনতার ভীড় জমে।কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন নির্বাচনী এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, হাওরের মাঝে সাবমারজেবল রাস্তা তৈরি, ব্রীজ, কালভার্ট, বিদ্যুতায়নসহ এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণে হাজার হাজার নারী-পুরুষের সরকারী চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হাওরাঞ্চলের সিংহ পুরুষ লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তিলাভে মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী উপজেলা থেকে শুরু করে সারা জেলায় বিএনপির অভ্রন্তরে স্বস্থির বাতাস বাইছে। আগামী নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে অবদান রাখবেন বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেছেন।গত ২৩ ফেব্রিুয়ারি জেলা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে কাটিয়ে আমি আবার আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আপনাদের ভালবাসা, দোয়া এবং সমর্থন আমাকে এই দীর্ঘ পথ চলতে শক্তি যুগিয়েছে। আমি আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। জালিম খুনী হাসিনা সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, ফাঁসির দন্ড দিয়েছে, অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আমাকে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আপোষ করিনি। জালিম সরকারের কাছে মাথা নত করিনি। আমি সর্বদা সত্যের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।

তিনি আরো বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে রাজী না হওয়ায় বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে অন্যায় ভাবে আমাকে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল। নেত্রকোনাসহ দেশবাসীর দোয়া ও সমর্থন পাওয়ায় এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সবকটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছি। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমি আমার জীবন বাজি রাখতে রাজি আছি, যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দেশে এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ২৩ ফেব্রæয়ারী মদন উপজেলাস্থ বাসভবনে অবস্থান করে টানা ৩দিন মদন-মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সভায় তিনি অর্ন্তবতীকালীন সরকারের কাছে দ্রæত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনার জন্য দাবী জানিয়েছেন।

এ আসনে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী একটি বেসরকারী কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আল হেলাল তালুকদার স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত্। তিনি ১৯৯৭ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি, ১৯৯৯ সালে মোহনগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাধারন সম্পাদক, ২০০৫ সালে আনন্দ মোহন বিশ^বিদ্যালয় কলেজ ছাত্র শিবিরের সাধারন সম্পাদক এবং ২০০৬ সালে সভাপতি, ২০০৮ সালে জামায়াত ইসলামীতে যোগদান করেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি নেত্রকোনা ছাত্র কল্যাণ সমিতি ময়মনসিংহের সাবেক সভাপতি, নেত্রকোনা সমিতি ময়মনসিংহের সাংগঠনিক সম্পাদক, মোহনগঞ্জ সমিতি ময়মনসিংহের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, চেয়ারম্যান মোহনগঞ্জ উন্নয়ন ফোরাম, নেত্রকোনা হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে সংগ্রামী ভুমিকা রাখায় অধ্যাপক মো. আল হেলাল তালুকদারের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা মডেল থানা ও মোহনগঞ্জ থানায় ৭টি মামলা হয়েছে। 

তিনি ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় পৃথক মামলায় দুইবার কারাবরণ করেন। গত নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় টিম সংসদীয় আসনের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য জামায়াতের পুরুষ ও মহিলা রুকন, জামায়াতে ইসলামী ও শ্রমিক কল্যাণ বিভাগের ইউনিয়ন সভাপতি ও সেক্রেটারী, ছাত্র শিবির ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থার প্রতিনিধিদের গোপন ব্যালট ভোট সংগ্রহ করে। পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে গোপনে সংসদীয় আসন এলাকায় সাংগঠনিক ভাবে সবোর্চ্চ ভোট প্রাপ্তদের জনমত জরিপ করা হয়।

তৃণমূলের ভোট জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ২৯ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর পার্লামেন্টরি বোর্ডের মিটিংয়ে নেত্রকোনা-৪ আসনে অধ্যাপক মো. আল হেলাল তালুকদারসহ ৩’শ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম চুড়ান্ত করা হয়েছে।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ