প্রতিনিধি 7 October 2024 , 8:29:59 প্রিন্ট সংস্করণ
সুমন চন্দ্র দে, মহেশখালী (কক্সবাজার)
মহেশখালী উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি না থাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাচ্ছে শিশু ও কিশোরেরা। ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু কিশোরেরা অবাধে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সামনে প্রকাশ্যে পৌরসভায় এবং আশপাশের এলাকায় বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছে এসব ব্যাটারী চালিত মিশুক বা টমটম।
সচেতন মহলের দাবি, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ শিশু-কিশোরেরা যান্ত্রিক এ বাহন চালানোয় শঙ্কা বাড়ছে দুর্ঘটনার, সেই সঙ্গে লঙ্ঘন হচ্ছে শিশুশ্রম আইন।
সরেজমিন দেখা যায়, মহেশখালী পৌর শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে প্রতিদিন সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় শতাধিক অটোরিকশাচালক ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোর। আর এসব শিশু চালকের অধিকাংশের হাতে মোবাইলের ও কানে হেডফোন লাগিয়ে বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চালাচ্ছে মহেশখালী উপজেলার প্রধান সড়কে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের নজরে পড়লেও বিষয়টি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। এতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু কিশোর অটোরিকশা চালক।
প্রতিবেদকের কথা হয় ১২ বছর বয়সী মিশুকচালক ফয়ছাল সঙ্গে। সে বলছে, ‘রোজগার ভালো হয় ব্যাটারী চালিত মিশুক গাড়ীতে। পৌরসভার গোরকঘাটা বাজার থেকে মিশুক ভাড়া নিয়ে গত ৩ মাস ধরে চালাচ্ছি। আগে ভয় করত যদি পুলিশ গাড়ি আটকায়! কিন্তু এখন তারা কিছু বলে না!
৯ বছর বয়সী মিশুকচালক সজীব বলছে, হোটেলে ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করলে ৩০০ টাকা পাই। অটোরিকশা চালালে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মিশুক আনছি। পুলিশ আটকালে পরে মিশুকের মালিক ছাড়ায়ে নেয়।
১৩ বছর বয়সী আরেক মিশুক চালক বলছে, ‘আগে আমার বাবা চালাতেন। এখন তিনি অসুস্থ। অন্য কাজ থেকে মিশুক চালানোতে পরিশ্রম কম। তাই ৮ মাস ধরে মিশুক গাড়ি চালাচ্ছি।’
প্রাপ্তবয়স্ক অটোরিকশাচালক ছৈয়দ মিয়া বলেন, ‘ছোট শিশু হওয়ায় এরা মিশুক-টমটম গাড়ীর গতি নিয়ে কিছুই জানেনা। যখন-তখন ভিড়ের মধ্যে ওভারটেক করে এবং মিশুক ঘোরানোর চেষ্টা করে। এতে আমাদের টমটম চালাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’
পৌর এলাকার বাসিন্দা জিকু বলেন, ‘শিশু চালকেরা হঠাৎ করে সড়কের ওপর মিশুক ঘোরানোর জন্য প্রায়ই মোটরসাইকেল চালকেরা দুর্ঘটনার শিকার হয়।’
মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল বশর পারভেজ বলেন, ‘যেখানে লাইসেন্স ছাড়া যান্ত্রিক বাহন চালানো নিষেধ, সেখানে প্রকাশ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোররা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাচ্ছে। অনভিজ্ঞ এসব শিশু কিশোররা অটোরিকশা চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি করছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এখনই এসব নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ কাইছার হামিদ বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীকি মারমা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আলোচনা হয়েছে। আমরা অভিযানে মাঠে নামব এবং বিষয়টি নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাব।