প্রতিনিধি 26 April 2025 , 11:10:20 প্রিন্ট সংস্করণ
বেলাল হোসেন, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে অপহরণের পাঁচ বছর পর নাটকীয়ভাবে ফিরে এসেছে সামাউন আলী নামে এক স্কুলছাত্র। থানায় এসে পুলিশের কাছে স্যালেন্ডার করার পর পরিবারের কাছে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে তার এই ফিরে আসার ঘটনা এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সামাউন আলী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের গোগবস্তি গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী।
অপহরণ ও গুমের রহস্য:
পরিবারের ভাষ্যমতে, পাঁচ বছর আগে নবম শ্রেণির ছাত্র সামাউন আলীকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায় তার চাচাতো ভাই জমিরুল ইসলাম ওরফে মিঠুন। ঢাকায় পৌঁছানোর কিছুদিন পরই ছেলেটির সাথে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও ছেলেকে ফেরত পায়নি পরিবার। এসময়ে মিঠুনের কাছ থেকে টাকা নিয়েও সামাউনকে ফেরত পাওয়া যায়নি।
শেষমেষ সাত মাস আগে সামাউনের বাবা আব্দুস সোবহান ঠাকুরগাঁও আদালতে অপহরণের মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি করা হয় সামাউনের চাচা আব্দুল খালেক এবং চাচাতো ভাই জমিরুল ইসলামকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানাকে এজাহার রুজু করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
কষ্টের দিনগুলো:
আব্দুস সোবহান জানান, “অনেক চেষ্টা করেছি ছেলেকে ফেরানোর। মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা হলেও ছেলের অবস্থান জানা যেত না। ফোনে শুধু টাকা চাইতো, পরে নম্বর বন্ধ হয়ে যেত।”
স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বসলেও কোনো সমাধান আসেনি। সম্প্রতি একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে জানান, সামাউন বাড়ি ফিরছে। শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে পৌঁছে নিজেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সামাউন। পরে পুলিশের সহায়তায় তাকে থানায় আনা হয়।
স্কুলছাত্রের বর্ণনা:
উদ্ধার হওয়া সামাউন জানান, তাকে নরসিংদী জেলার একটি গুদামে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাকে শ্রম দিতে বাধ্য করা হতো এবং তার আয়ের টাকা অন্য কেউ তুলে নিত। পরে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। সামাউন দাবি করেন, তাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়েছে।
আইনি প্রক্রিয়া চলছে:
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী জানান, “যেহেতু অপহরণের মামলা চলমান, তাই আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী সামাউনকে আদালতে হাজির করার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
গ্রামজুড়ে উচ্ছ্বাস:
সামাউনের ফিরে আসার খবরে এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে। এক নজর ছেলেটিকে দেখার জন্য বালিয়াডাঙ্গী থানায় ভিড় জমায় গ্রামবাসী।