অন্যান্য

অনলাইন জুয়ায় শাস্তি বাড়ছে ২ হাজার গুণ| বাতিল হচ্ছে দেড়শ বছরের আইন

  প্রতিনিধি 2 May 2025 , 7:35:05 প্রিন্ট সংস্করণ


ছড়িয়ে পড়েছে ‘জুয়ার ভাইরাস’! যশোরে সর্বনাশা অনলাইন জুয়ার চক্রে তরুণদের নিঃস্ব হওয়ার হিড়িক


মাহতিম আহমেদ রাজা

১৫৭ বছরের পুরনো ‘দ্য গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭’ বাতিল করে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যুগোপযোগী এই অধ্যাদেশে জুয়ার শাস্তি দুই হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অনলাইন জুয়া, বেটিং, পাতানো খেলা, হাউজি, লটারি—সব ধরনের জুয়া কার্যক্রমকে কঠোরভাবে দমন করতে এ অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে কঠিনতম সাজা।

পুরনো আইন: নামমাত্র শাস্তি, ফলে ছড়িয়ে পড়েছিল ভয়াবহতা

১৮৬৭ সালের আইন অনুযায়ী, জুয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মাত্র ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৬০০ টাকা জরিমানা। এত অপ্রাসঙ্গিক আইন দিয়ে অনলাইন ও ডিজিটাল জুয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। ফলে দেশে তৈরি হয় এক ভয়ংকর বাস্তবতা—মোবাইল, অ্যাপস, ওয়েবসাইট, এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও জমে উঠেছিল কোটি টাকার জুয়ার আসর।

যশোর: অনলাইন জুয়ার গোপন হটস্পট!

গ্রামীণ-শান্ত যশোর এখন অনলাইন জুয়ার ভয়াল বিস্তার নিয়ে মাথাব্যথার কেন্দ্র। এর ভয়াবহতা সব থেকে বেশি দেখা গেছে মণিরামপুরে,  নওয়াপাড়া, কেশবপুর, চৌগাছা, বাঘারপাড়া—সবখানেই গোপনে পরিচালিত হচ্ছে জুয়ার চক্র।

স্কুল-কলেজের ছাত্র, প্রবাসফেরত যুবক, এমনকি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও জড়িয়ে পড়ছে “1xBet”, “Mostbet”, “Fairplay” জাতীয় অ্যাপে। এসব অ্যাপ VPN দিয়ে চালানো হয়, টাকা লেনদেন হয় বিকাশ-নগদের মাধ্যমে।

যশোর জেলা পুলিশের গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে,

> “গত ৩ মাসে শুধু অনলাইন বেটিং সংশ্লিষ্ট ঘটনায়  অন্তত ১৩ জন চরম মানসিক বিপর্যয়ে ভুগছে।”

জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ একাধিক অভিযান চালালেও, অপর্যাপ্ত আইন থাকায় চক্রের মূল হোতারা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে এমন গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

নতুন আইন: অপরাধ অনুযায়ী ভয়াবহ শাস্তির বিধান

অ্যাডভোকেট পল্লবের পরামর্শ: “শাস্তির পাশাপাশি প্রয়োগ জরুরি”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ন কবির পল্লব ‘দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ’-কে বলেন,

  • > “নতুন আইনে শাস্তির পরিমাণ যথাযথ, তবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন জুয়া চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন,

  • > “এই সেল থেকে অপরাধ পর্যবেক্ষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে পারলে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করা সহজ হবে।”

জুয়াড়িদের আর সহজে রক্ষা নয়

এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে দেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন-ভিত্তিক জুয়ার বিরুদ্ধে আইনি যুদ্ধ শুরু হবে। যশোরসহ দেশের প্রতিটি জেলায় সক্রিয় এই অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে দমন অভিযান আরও কার্যকর হবে। আর কেউ গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার অপরাধে ফিরে যেতে পারবে না।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ