প্রতিনিধি 16 May 2025 , 5:51:08 প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিবেদকঃ সোহেল রানা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে নির্দেশ — এমন ঘোষণার পরও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বনানীর আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা শহর আলী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, দখল, দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ। তবুও তিনি কেন অধরা, এমন প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বনানী থানাধীন ২০নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি শেখ শহর আলী। জানা গেছে, তিনি মূলত ‘শহর আলী’ নামেই পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে ‘শেখ’ উপসর্গ ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় তিনি মহাখালী ও ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী পরিবারগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চালাতেন। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিজ হাতে অনেককে গ্রেফতার করিয়েছেন, দিয়েছেন মামলা করার তালিকা। অভিযোগ আছে, পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের পরিবার থেকে চাঁদা আদায়, না পেলে হুমকি বা লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শহর আলী এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে ফকিরদের কাছ থেকেও ভাগ আদায় করতেন। কড়াইল বস্তিতে টিসিবির পণ্য সরবরাহ, সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া—সব কিছুতে অর্থের বিনিময়ে হাত ছিল তাঁর। সরকার পতনের আগে এই নেতা বস্তির চাঁদা, অবৈধ গ্যাস–পানি সংযোগ ও দখল বানিজ্যে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বিচার সালিশের নামে মোটা অঙ্কে টাকা আদায় করতেন, যার ন্যূনতম অঙ্ক ১০ হাজার টাকা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মহাখালীর বাসিন্দা খাদিজা বেগম জানান, প্রতিমাসে টিসিবি পণ্য বিতরণের সময় শহর আলী নিজে উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগপন্থীদের আগে পণ্য নিতে দিতেন। সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পেত না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তিনি বলতেন, “আওয়ামী লীগরে ভোট দিছো যে কথা কও? আমি চিনি কারা দিছে, কারা দেয়নি। বেশি কইলে গলা ধাক্কা দিয়া সরায়া দিমু।”
ওয়্যারলেস গেট মোড়ের ফুটপাত থেকে শুরু করে বস্তির দোকানদাররাও শহর আলীর চাঁদাবাজির শিকার ছিল বলে জানিয়েছেন অনেকে। সরকার পতনের পর এক পর্যায়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান, বাড়ি থেকেও বের হতেন না। কিন্তু সম্প্রতি আবার দেখা যাচ্ছে তাকে বনানী, মহাখালী ও কড়াইল এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে।
বনানী থানায় একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে নজরদারি করে দেখা গেছে, তার চলাফেরা রহস্যজনক। কখনও মুহূর্তেই উধাও হয়ে যান। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি দেশ ছাড়তে চাচ্ছেন এবং বিদেশে থাকা দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
জনমনে প্রশ্ন—কার ইন্ধনে এই ‘অভিযুক্ত শহর আলী’ এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? স্থানীয়দের দাবি, শহর আলীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, অন্যথায় পুনরায় অশান্তির ঝুঁকিতে পড়তে পারে এলাকাটি।