প্রতিনিধি 17 May 2025 , 11:45:21 প্রিন্ট সংস্করণ
হারবাল তেলের নামে ভুয়া পণ্যের ছড়াছড়ি, তরুণদের প্রতি বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ
ঢাকা | ১৭ মে ২০২৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল এমন কিছু ট্রেন্ড তৈরি হয় যা প্রথমে সবাইকে হাসায়, পরে ফাঁদে ফেলে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘সান্ডা’ নামক একটি শব্দ এমনই এক ভাইরাল ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউব—সব জায়গায় ‘সান্ডা’ নিয়ে চলছে মজার ভিডিও, রিল ও মিমের বন্যা। কিন্তু এই হাসির আড়ালে ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এক বিপজ্জনক প্রতারণা—হারবাল তেলের নামে শরীর ও অর্থ দুটোই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা।
‘সান্ডা’ কী এবং কেন ভাইরাল?
মূলত এটি একটি ভারতীয় হারবাল যৌনবর্ধক তেলের নাম, যা বিভিন্ন ভারতীয় প্রাদেশিক মার্কেটে কমদামে বিক্রি হয়। কিছু অসাধু অনলাইন পেইজ ও ড্রপশিপিং চক্র বাংলাদেশে অনুমোদন ছাড়াই এই পণ্য বিক্রি করছে। মজার বিষয় হলো—এই তেলকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে নানা হাস্যরসাত্মক ভিডিও, যেখানে ‘সান্ডা’ শব্দটি উচ্চারণ করেই দর্শকদের মধ্যে তৈরি হয় বিনোদনের জোয়ার।
কিন্তু সমস্যাটা তখনই শুরু হয়, যখন কেউ এই শব্দের মজায় ঢুকে পড়ে বাস্তব কেনাকাটায়।
ভাইরালের ছলে ভুয়া পণ্যের বিপণন!
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নজর রাখলেই দেখা যাবে ‘অরিজিনাল সান্ডা অয়েল’, ‘সান্ডা ইন্ডিয়া থেকে সরাসরি আনা’, ‘১০ দিনে রেজাল্ট’ ইত্যাদি শিরোনামে একাধিক পোস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব পণ্যে নেই কোনো ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন, নেই কোনো চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের মান্যতা। অথচ অনেকে লোভে পড়ে এসব পণ্য কিনছেন, যার ফলে পরে শরীরের ক্ষতি কিংবা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা ও উদ্বেগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. ফারহানা হোসেন বলেন, “এই জাতীয় যৌন উদ্দীপক হারবাল পণ্যে অজানা রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে, যা হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। এসব তেল প্রয়োগে চর্মরোগ, ইনফেকশন এবং মানসিক উদ্বেগ পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।”
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক রাশেদুল হাসান বলেন, “অনেক ভুয়া ই-কমার্স সাইট এই ভাইরাল ট্রেন্ডকে ব্যবহার করে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে, আবার অনেকেই ক্লিকবেইট লিংকের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।”
তরুণদের প্রতি বার্তা: সচেতন হন, প্রতারিত হবেন না
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মজার ভিডিও দেখা যেতেই পারে, তবে সেখানে থেমে যাওয়া জরুরি। বাস্তবে এসব পণ্যের প্রতারণামূলক ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দায়িত্বশীলতা থাকা উচিত যেন মজা করতে গিয়েও কাউকে অন্ধকারে ঠেলে না দেওয়া হয়।
একটা শব্দ দিয়ে নেটদুনিয়া হাসছে ঠিকই, কিন্তু সেই শব্দ যখন বাণিজ্যের অস্ত্র হয়ে ওঠে—তখন সেটা শুধু ট্রেন্ড নয়, একটা বিপদও বটে। ‘সান্ডা’ তার বড় উদাহরণ। এখন সময় হাসির সঙ্গে সচেতনতারও।