অন্যান্য

লোহাগড়ায় খাজা মোল্যা হত্যা: প্রতিশোধের নামে ভয়াবহ লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞে আতঙ্কিত গ্রামবাসী

  প্রতিনিধি 22 May 2025 , 9:52:32 প্রিন্ট সংস্করণ

রাশেদ রাসু:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের কুমারডাঙ্গা গ্রামে খাজা মোল্যা (৪২) হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে চলছে লাগাতার সহিংসতা, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ। হত্যাকাণ্ডের পরপরই বাদীপক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে, নারী ও শিশুরা পর্যন্ত বাড়িছাড়া হয়ে পড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত এক সপ্তাহ ধরে অন্তত ৪০টি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজনের দাবি, এসব হামলা পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদুল ইসলামের নেতৃত্বে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি সন্ত্রাসী চক্র পরিচালনা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, হুমকি, ও গ্রাম্য সালিশের নামে নির্যাতনের অভিযোগ।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিনিয়ত রাতের অন্ধকারে অস্ত্রধারী দল ঘরে ঢুকে নারীদের গালিগালাজ, শিশুদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, গরু-বাছুর, ধান-পাট, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ফারজানা ববি জানান, তার ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য ঘরে রাখা ৫ লাখ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ সব কিছু লুট করে নিয়েছে হামলাকারীরা। ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে শত মণ পাট ও ধান। এমনকি ১৩টি গরুও লুটে নেয়া হয়েছে। ছোট ছেলেকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

অপর ভুক্তভোগী সাবিনা ইসলাম বন্যা জানান, তার স্বামী পলাশ শেখ সামাজিক ভালো কাজে জড়িত থাকার কারণে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাদের বাড়ি বসবাসের অযোগ্য করে তোলা হয়েছে, সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

বৃদ্ধা মেহেরুন্নেসা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে বৌমা ও নাতিকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে। ২৫ ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকা, মাছের ঘের, কোরবানির গরু সব নিয়ে গেছে। এখন গোয়াল ঘরে থাকতে হচ্ছে আমাকে।”

ব্যবসায়ী রওশন আরা বেগমসহ আরও অনেকেই জানান, শত শত মণ ধান, শস্য, গৃহস্থালির মালামাল লুটপাট হয়েছে। শহীদ শেখ, শাহীন শেখ ও মিলন মোল্যার বাড়িতেও হামলা হয়েছে।

অন্যদিকে, মামলার বাদী নিহত খাজা মোল্যার ভাই আলী হায়দার মোল্যা দাবি করেন, তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হামলা বা অগ্নিসংযোগ করা হয়নি। বরং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।” মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আজিজুর তালুকদার জানান, “খাজা মোল্যা হত্যা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।”

স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক বলেন, “এই গ্রামে এখন ন্যায়বিচার চাওয়া মানেই হামলার শিকার হওয়া। প্রশাসনের নীরবতা দুঃখজনক।”

উল্লেখ্য, গত ১৪ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কুমারডাঙ্গা বাজারে চায়ের দোকানের সামনে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে খুন হন খাজা মোল্যা। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা ও নিরাপত্তাহীনতা।

এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে র‌্যাব বা সেনা মোতায়েন করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং নিরীহ মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় কুমারডাঙ্গা গ্রাম রূপ নিতে পারে অশান্তির আগুনে পুড়ে যাওয়া এক বিপর্যস্ত জনপদে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ