প্রতিনিধি 17 June 2025 , 3:05:30 প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলার মাটি থেকে রাজাকারদের রক্ত ঝরিয়েছিলেন যিনি, সেই বীর নারী সখিনা বেগম আজ ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হলেন চিরস্থায়ী বিদায়ের খবরে।বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯২) বার্ধক্যজনিত কারণে মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তার ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার।
বীরত্বগাথা: দা দিয়ে হত্যা করেছিলেন পাঁচ রাজাকার
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত আজও বিরল। কিন্তু সখিনা বেগম ব্যতিক্রম। কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামের মেয়ে সখিনা যুদ্ধ চলাকালে রান্নার কাজ করতেন বসু বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। গোপনে সংগ্রহ করতেন শত্রুদের গতিবিধির খবর। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একবার ধরা পড়েন, কিন্তু কৌশলে পালিয়ে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন একটি ধারালো দা। পরে সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।সেই ঐতিহাসিক দাটি আজও গর্বের প্রতীক হয়ে সংরক্ষিত আছে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে, যেখানে সখিনা বেগমের নাম উৎকীর্ণ রয়েছে গর্বিত বর্ণনায়।
প্রতিশোধ থেকে বীরত্বে রূপান্তর
সখিনার বীরত্বের আরেক প্রেক্ষাপট ছিল ব্যক্তিগত ক্ষত। তার প্রিয় ভাগনে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। ভাগনের মৃত্যুই সখিনাকে এক প্রতিশোধপরায়ণ, দৃঢ়চেতা যোদ্ধায় রূপান্তর করে। যার ফল ছিল পাঁচ রাজাকারের নির্মম পরিণতি।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি
নিকলী উপজেলার ইউএনও রেহানা মজুমদার জানিয়েছেন, সখিনা বেগমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিকেলে আসরের নামাজ শেষে গুরুই মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং তাকে দাফন করা হবে গুরুই কবরস্থানেনারীর বীরত্বের এক অনন্য ইতিহাসবীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যুতে হারালো বাংলাদেশ একজন সাহসী নারী যোদ্ধাকে, যিনি প্রমাণ করেছিলেন স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে লিঙ্গ নয়, প্রয়োজন সাহস, চেতনা আর প্রতিশোধের আগুন।
আজকের এই মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতার মূলে ছিল রক্ত, ত্যাগ আর অসীম সাহসের ইতিহাস। সখিনা বেগম ছিলেন সেই ইতিহাসের উজ্জ্বলতম দীপ্তি।